দু’দিনের বাংলা সফরের দ্বিতীয় দিনে ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। আর সেই কর্মসূচির সূচনা তিনি করলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মা ভবতারিণীর পুজো করে। তারপরেই দক্ষিণেশ্বরে দাঁড়িয়ে রাজ্যকে তোষণের রাজনীতি নিয়ে তোপ দাগলেন তিনি। বললেন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের মতো মহাত্মাদের ভূমিতেই আজ তোষণের রাজনীতি চলছে। এতে বাংলার পরম্পরা নষ্ট হচ্ছে। তা যাতে না হয় তার জন্য বাংলার মানুষদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এদিন বিশেষ পুজোর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরে। নিজে হাতে মা ভবতারিণীর আরতি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুজো দিয়ে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে অমিত শাহ বলেন, “আজ আমার বাংলা সফরের দ্বিতীয় দিন। আর এই দিনের শুরু আমি দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে করছি। এই মন্দিরে ভারতবর্ষের অনেকে এসে উজ্জীবিত হয়েছেন। আমি এর আগেও অনেক বার এই মন্দিরে এসেছি। যখনই এসেছি নতুন উদ্দীপনা ও চেতনা নিয়ে ফিরেছি।” তিনি আরও বলেন, “এটা বাংলার প্রবিত্র ভূমি। এখানেই চৈতন্য মহাপ্রভু, স্বামী প্রণবানন্দ, ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দের মতো ভক্তিমার্গের মানুষ জন্মেছেন। আজ এই ভূমিতেই তোষণের রাজনীতি হচ্ছে। এতে বাংলার পরম্পরা নষ্ট হচ্ছে।”
এই অবস্থা থেকে বাংলাকে বের করে আনার জন্য রাজ্যের মানুষের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি বাংলার মানুষদের কাছে আবেদন করছি, যে আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র বাংলা ছিল তা যেন ফের একবার হয়। আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। আজ মা কালীর কাছে বাংলা ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করেছি আমি। মোদীজির নেতৃত্বে এই দেশ ফের একবার বিশ্বে নিজের গৌরবময় অবস্থা ফিরে পায়, সেই প্রার্থনা করেছি আমি।”
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসার অনেক আগে থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর। সকাল ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ নিউটাউনের হোটেল থেকে বেরিয়ে সকাল ১১টা নাগাদ দক্ষিণেশ্বরে পোঁছয় অমিত শাহের কনভয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বাংলার দায়িত্ব থাকা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রমুখ। এছাড়া বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা- সহ আরও অনেকে ছিলেন সেখানে। তাঁদের স্বাগত জানান বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল- সহ মহিলা মোর্চার সদস্যরা।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে বেরিয়ে অমিত শাহ যান টালিগঞ্জে। সেখানে গলফ ক্লাব রোডে সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর গানের স্কুল শ্রুতিনন্দনে যান তিনি। সঙ্গে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরাও ছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজে এসে আপ্যায়ণ করেন অজয়বাবু। তাঁর স্কুলের বাইরে জড়ো হয়ে পতাকা হাতে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা।
যদিও অমিত শাহ আসার আগে অজয় চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “অমিত শাহের মতো এত বড় মাপের একজন কলকাতায় এসে আমার স্কুলে আসছেন সঙ্গীতের উন্নতি নিয়ে কথা বলতে। এতে আমি ধন্য। ওনাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। ওনার মতো মানুষকে আমন্ত্রণ করার ধৃষ্টতা তো আমার নেই। উনি নিজেই আসতে চেয়েছেন। আমি সঙ্গীত ছাড়া আর কিছুই জানি না। আমার স্কুলে আবদুল কালাম, মোহন ভাগবতরাও এসেছেন।” যদিও আগামী দিনে রাজনীতিতে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাকে তো চেনেন। এটাই যথেষ্ট আমার জন্য।”
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইজেডসিসিতে যাওয়ার কথা অমিত শাহের। সেখানে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন তিনি। তারপরে সাংবাদিক বৈঠক করবেন তিনি। তবে তার মধ্যে বাগুইআটিতে এক মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।