করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতে সামনেই নাকি তৃতীয় ঢেউ আসছে, এমন হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ। তার মধ্যেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ এর একটি নতুন ভ্যারিয়েন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়ে তা থেকে ভারতে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের সূচনা হতে পারে বলে কেন্দ্রকে সাবধান করে দিলেন। বিশেষ করে করোনার সিঙ্গাপুর প্রজাতিটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ, মারাত্মক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর প্রস্তাব, এখনই সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে বাচ্চাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ানোর বন্দোবস্ত করুন। ট্যুইটে মোদী সরকারকে তিনি সাবধান করেছেন।
Asha
যে সময়ে কেজরিওয়াল এমন বিপদের হুঁশিয়ারি দিলেন তখন দিল্লি খানিকটা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত সামলে উঠতে পেরেছে। দিল্লিতে কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা গতকাল কমে হয়েছে ৪৪৮২। সংক্রমণের পজিটিভিটি হার কমে এসেছে ৬.৮৯ শতাংশে। দিল্লি ক্রমশঃ সুস্থতার পথে ফিরছে। গত মাাসে সেখানে দৈনিক সংক্রমণ সর্বোচ্চ ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি চলছে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ। গত ২৪ ঘন্টায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১ লাখ ১৩৩১০ জন। এখনও পর্যন্ত সেখানে ভ্যাকসিনে ডোজ পাওয়া লোকের সংখ্যা ৪৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৫।
করোনার প্রথম ঢেউ সাফল্যের সঙ্গে রুখে দেওয়ায় প্রশংসা হচ্ছিল সিঙ্গাপুর, তাইওয়ানের। কিন্তু ইদানীং দুদেশ নিজ নিজ ভূখন্ডে কঠোর বিধিনিষেধ ফের চালু করছে, পরস্পরের মধ্যে বিমান যোগাযোগেও বিধিনিষেধ জারি করছে।
সিঙ্গাপুরে রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি থেকে কাজ করাই হয়ে উঠছে কার্যত অঘোষিত স্বীকৃত নিয়ম। এক বছর আগের জারি করা লকডাউন সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ফেরাচ্ছে তারা। সংক্রমিত পড়ুয়াদের রক্ষা করতে সাতটি স্কুল বাড়িতে, ঘরে বসে পড়াশোনায় জোর দিচ্ছে। ১৬-র কমবয়সিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার প্ল্যান করা হয়েছে।
সরকারি কর্তারা সিঙ্গাপুর বাসীদের মাস্ক পরতে বলছেন, অন্যদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, পান করার মতো যেসব কাজে মাস্ক নামিয়ে রাখতে হয়, সেসব থেকে আগামী ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। গত ১৪ মে সিঙ্গাপুর এক মাসের জন্য সর্বশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছে। রবিবার সেদেশে ৩৮টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে স্থানীয় স্তরে। সিঙ্গাপুরে গত ৯ মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ হয় গত ২৯ এপ্রিল। দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলির একটিতে ক্লাস্টার করা হয়। চাঙ্গি বিমানবন্দরে এক কর্মীর মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্তারা গোটা দেশে উচ্চমাত্রায় অ্যালার্ট জারি করেন।
সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান বিমান যোগাযোগেও কড়াকড়ি চালু হয়েছে। সিঙ্গাপুর এর আগে তাইওয়ান থেকে আসা যাত্রীদের ঢুকতে দিচ্ছিল, তাঁদের কোয়ারান্টিনও করা হত না। কিন্তু শনিবার তারা গত ২১ দিনে তাইওয়ানে গিয়েছেন, এরকম স্বল্পমেয়াদী যাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আর নিজের দেশের স্থায়ী নাগরিক বাসিন্দা ও দীর্ঘমেয়াদি পাসপোর্টধারী লোকজনকে দেশে ঢোকার পর কোয়ারান্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে।