সপ্তাহে অন্তত চারদিন টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রকের, কোন রাজ্যে কতদিন জানুন

যে হারে টিকাকরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার তুলনায় গতি অনেকটাই কম বলে আগেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। যেহেতু টিকাকরণ ঐচ্ছিক, তাই প্রথমদিনে তিন লাখের জায়গায় টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকা নিয়ে সংশয়ের কারণে এই গতি কমেছে বলেই ধারণা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। টিকাকরণের দ্বিতীয় দিনেও সংখ্যা কম। এখনও অবধি মোট ২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন দেশে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ রবিবার ৬টি রাজ্যের মোট ১৭ হাজার টিকা নিয়েছেন। ৫৫৩টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল, মনিপুর ও তামিলনাড়ুতে টিকাকরণ হয়েছে দ্বিতীয়দিনে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক যদিও জানাচ্ছে, যেসব হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ হচ্ছে সেখানে যাতে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও সমস্যা না নয়, সেজন্যই হুড়োহুড়ি না করে ধীরে ধীরেই টিকা বন্টন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব ডক্টর মনোহর আগনানি বলেছেন, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকাগুলিতে সপ্তাহে চারদিন টিকাকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে গোয়া ও উত্তরপ্রদেশ সপ্তাহে দু’দিন টিকাকরণের কর্মসূচী রেখেছে, মিজোরাম চারদিন ও অন্ধ্রপ্রদেশে সপ্তাহে ৬দিন টিকাকরণ হবে।

আন্দামান ও নিকোবরে সপ্তাহে তিনদিন টিকা দেওয়া হবে—সোমবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার।

অরুণাচলপ্রদেশে সপ্তাহে চারদিন—সোমবার, বহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার।

অসম ও বিহারে সপ্তাহে চারদিন—সোমবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার।

কেরল, লাদাখ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও মনিপুরে সপ্তাহে চারদিন টিকাকরণ হবে।

নাগাল্যান্ড ও ওড়িশায় সপ্তাহে তিনদিন করে এবং পণ্ডিচেরী, পঞ্জাব, রাজস্থান, সিকিমে সপ্তাহে চারদিন করে টিকা দেওয়া হবে।

পশ্চিমবঙ্গে, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ডে সপ্তাহে চারদিন টিকাকরণ হবে। পশ্চিমবঙ্গে সোমবার, মঙ্গলবার, শুক্র ও শনিবার টিকা দেওয়ার হবে।

টিকারণের জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর এখনও মেলেনি বলেই দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। গত দু’দিনে মোট ৪৪৭ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ করা হয়েছে। দিল্লিতে এখনও অবধি ৫১ জনের শরীরে সাইড এফেক্টস দেখা গেছে তবে তা সামান্য বলেই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। টিকা দেওয়ার পরে কোনওরকম শারীরিক সমস্যা হলে কী করণীয় তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে কেন্দ্রের। স্বাস্থ্যকর্মীদের সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

জেলায় জেলায় এইএফআই ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খোলার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতি ব্লকে অন্তত একটি করে ইমিউনাইজেশন সেন্টার খুলতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি হেলথ সেন্টার বা জেলা হাসপাতালগুলিতে এই সেন্টার খোলা যেতে পারে। টিকাকরণ যেখানে হচ্ছে তার আশপাশেও এইএফআই ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খোলা যেতে পারে। টিকা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোনও অ্যাডভার্স সাইঢ এফেক্টস দেখা গেলে এই সেন্টারে যোগাযোগ করা যাবে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, অভিজ্ঞ ডাক্তাররা থাকবেন এই ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে। টিকা নেওয়ার পরে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং তা সারানোর জন্য কী করণীয়, সে সব ট্রেনিং দেওয়া থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের।

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার ডোজে সাময়িক প্রতিক্রিয়া হবেই। আর এটাই হল সঙ্কেত যে টিকা ঠিকঠাক কাজ করছে। টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর সেই জায়গা ফুলে ওঠে, হাল্কা ব্যথা হয়। এটা গুরুতর কোনও প্রতিক্রিয়া নয়। জ্বর এবং কাঁপুনি আরও দুটো উপসর্গ যেটা অনেক ভ্যাকসিনের ট্রায়ালেই দেখা গিয়েছে। ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট অবধি তাপমাত্রা উঠেছে শরীরের। সেই সঙ্গে কাঁপুনি। তবে যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চরম আকার নেয় তাহলেই সতর্ক হতে হবে। কোন টিকার ডোজে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, কার শরীরে কতটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে এ সবই খতিয়ে দেখবে এই ম্যানেজমেন্ট সেন্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.