দিল্লিতে অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে ‘জাতীয় পরিকল্পনা’ নিক কেন্দ্র, আগামীকাল অবধি সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট

রাজধানীতে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে দিল্লিতে হাইকোর্টের তুমুল ভর্ৎসনার পরে সুপ্রিম কোর্টে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেল কেন্দ্র। হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছিল দিল্লিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান দিতে অপারগ কেন্দ্রীয় সরকার, যে অফিসারদের গাফিলতিতে অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না দিল্লির হাসপাতালগুলিতে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। দিল্লি হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানাল, অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে ও সরবরাহ ঠিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লিতে চাহিদা মাফিক দিনের হিসেবে ৭০০ মেট্রিক টন করে অক্সিজেন কীভাবে পাঠানো যেতে পারে তার জন্য জাতীয় পরিকল্পনা করুক কেন্দ্র। কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা জানাতে বৃহস্পতিবার সকাল অবধি সময়ও দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি এমআর শাহের বেঞ্চ জানিয়েছে, শুধুমাত্র কযেকজন অফিসারকে গ্রেফতার করে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং রাজধানীতে প্রতিদিনের হিসেবে যে বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে তা সুনিশ্চিত করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে কেন্দ্রকে। মুখের কথায় আশ্বাস দিয়ে কাজ হবে না, এখন সুনির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান দরকার। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা অবধি সময় দেওয়া দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। তার মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান জমা করতে হবে শীর্ষ আদালতে।

দিল্লি সরকার জানিয়েছিল তারা দিনের হিসেবে ৫০০ মেট্রিক টন অবধি মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি করতে পারবে। এর বেশি দরকার হলে কেন্দ্রকেই তা সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু ইদানীং দিল্লিতে করোনা পরিস্থিতি যে ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে এবং যে হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে প্রতিদিনের হিসেবে মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা ৭০০ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালগুলিতে একের পর এক করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। শিশু হাসপাতালে সঙ্কটে রয়েছে সদ্যোজাতরাও। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে বার বার আর্জি জানিয়েছে দিল্লি সরকার। কিন্তু প্রতিবারই চাহিদার তুলনায় কম অক্সিজেন রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই সঙ্কট এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে আদালতকেও। চাহিদার তুলনায় কম অক্সিজেন কেন আসছে সে নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। মহারাষ্ট্র, গুজরাতের তুলনায় দিল্লি কেন অক্সিজেন কম পাচ্ছে, এখানে পক্ষপাতিত্বের ব্যাপার ঘটছে কিনা সে নিয়ে কেন্দ্রের কাছে জবাবও চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি ও বিচারপতি রেখা পাল্লির বেঞ্চ কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করে বলেছে, “আপনারা কি অক্সিজেনের অভাবে মানুষকে মরতে দেখতে চান? তাহলে উটপাখির মতো বালিতে মুখ লুকিয়ে থাকুন। কিন্তু আমরা পারব না।”

এদিন কেন্দ্রের পক্ষ নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এমআর শাহ বলেছেন, সরকার অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়ানো ও সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। অতিরিক্ত জোর দেওয়ার কারণে যদি অন্য রাজ্য থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসতে হয় তাহলে সেই রাজ্যে ঘাটতি বাড়বে। সেখানেও বিপদে পড়বে রোগীরা। কাজেই এখন তর্কবিতর্কের বদলে সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছে, দেশে অক্সিজেনের যতটা উৎপাদন হত এতদিন তা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পাঁচ হাজার মেট্রিক টন থেকে উৎপাদন ৯ হাজার মেট্রিক টনে নিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলগুলির নাইট্রোজেন প্ল্যানগুলিকেও অক্সিজেন প্ল্যান্টে বদলে দেওয়ার কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি মেডিক্যাল অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে বলেই দাবি করা হয়েছে সরকারি তরফে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.