ব্রিটেনে করোনার নতুন প্রজাতির সংক্রমণ হু হু করে ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই নতুন প্রজাতি। এই অবস্থায় অনেক দেশেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কিন্তু এতে ভারতীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও দরকার নেই, এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষ বর্ধন। তাঁর বক্তব্য, সরকার এই নতুন প্রজাতির সংক্রমণ ঘিরে সতর্ক।
সোমবার দুপুরে ডক্টর হর্ষ বর্ধন বলেন, “সরকার সম্পূর্ণভাবে সতর্ক রয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, গত এক বছর ধরে আমরা মানুষের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। কী করতে হবে সেই ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন তাহলে আমি বলব, আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।”
এর মধ্যেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের কাছে আবেদন করেছেন ব্রিটেন থেকে আসা সব বিমানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। তিনি বলেন, “ব্রিটেনে করোনার নতুন প্রজাতি দেখা গিয়েছে, যা খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করছি, যাতে ব্রিটেন থেকে সব বিমানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।”
রবিবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানক বলেন, “চূড়ান্ত কঠিন অবস্থায় পৌঁছেছে এ দেশের করোনা পরিস্থিতি। করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের কারণে বাড়ছে সংক্রমণ।”
শনিবারই ব্রিটেনের হেলথ সেক্রেটারি ম্যাট হ্যানকক জানিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের দক্ষিণে এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই নতুন প্রজাতি থেকে ফের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং তার গতি আগের থেকেও বেশি। ব্রিটেনে এই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এই কারণে রবিবার থেকে ফের লকডাউনও জারি হয়েছে বহু জায়গায়।
সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই নতুন প্রজাতির মাধ্যমে সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য ও দক্ষিণ-পূর্বে দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার জানাচ্ছে এই নতুন প্রজাতি আরও বেশি ক্ষতিকারক।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমরা ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই বিষয়ে জানিয়েছি। যদিও আমাদের কাছে এখনও এমন কোনও তথ্য নেই যাতে আমরা বলতে পারি এই নতুন প্রজাতির সংক্রমণে মৃত্যুর হারও বেশি হচ্ছে। এর ফলে চিকিৎসা পরিষেবার উপর প্রভাব পড়েছে। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
এই অবস্থায় ব্রিটেনে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে একাধিক দেশ। ইউরোপের দেশ ছাড়াও সেই তালিকায় অন্যান্য মহাদেশেরও অনেক দেশ রয়েছে। ব্রিটেন থেকে বিমান আসা ও যাওয়া দুটোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস। এছাড়া ইজরায়েল, তুরস্ক ও সৌদি আরবও সাময়িকভাবে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিবিসি সূত্রে খবর, এই নতুন প্রজাতি দেখা গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসেও। ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ব্রিটেন থেকে ফেরা এক ব্যক্তির মধ্যে এই একই প্রজাতির সংক্রমণ লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই সেই ব্যক্তি ও তাঁর সংস্পর্শে আসা সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
আপাতত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রিটেনের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে জার্মানি। আয়ারল্যান্ডের পরিবহণ মন্ত্রী আমন রিয়ান জানিয়েছেন, তাঁর দেশ সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা ব্রিটেনের সঙ্গে বিমান ও ফেরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শুধুমাত্র মালপত্র ও জরুরি পরিষেবা চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
সোমবার থেকে বিমান চলাচলে ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ফ্রান্সও। সেইসঙ্গে জাহাজ চলাচলও বন্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ব্রিটেন থেকে মাল নিয়ে ফ্রান্সের উদ্দেশে আসা সব ট্রাককে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত বিমান, জল ও সড়ক পথের সব যোগাযোগ বন্ধ করেছে তারা।
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে এই পরিবহণ পথ ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফ্রান্সের তরফে জানানো হয়েছে, ব্রিটেনে থাকা ফরাসি নাগরিকরা নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরেই বড়দিনে বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে তার আগে তাঁদের পরীক্ষা করে দেখা হবে।
নেদারল্যান্ডসের তরফে অন্তত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরণের পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ব্রিটেনের সঙ্গে। কারণ, সেখানেও একজনের শরীরে একই প্রজাতির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাই বেশি কড়াকড়ি করছে তারা। অন্যদিকে ব্রিটেন থেকে বিমান ও ট্রেন চলাচলে ২৪ ঘণ্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেলজিয়াম।
রবিবার জরুরি বৈঠকে বসেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রো, জার্মানির চান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিকেল। এই বিষয়ে আজ, সোমবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
গ্রিস জানিয়েছে ব্রিটেন থেকে আসা সবাইকে সাতদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বুলগেরিয়াও ব্রিটেনের সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইজরায়েল জানিয়েছে, ব্রিটেন, ডেনমার্ক ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কাউকে সেদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিমান পরিষবায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তুরস্কও। তারা ব্রিটেন ছাড়াও ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে এই বিমান চলাচল বন্ধ করেছে। আগামী এক সপ্তাহের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ করেছে সৌদি আরবও।