রাজ্যের সম্মতি ছাড়া কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে কোনও মামলায় যুক্ত করতে পারবে না কেন্দ্র, এমনটাই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ একদিকে যেমন কেন্দ্রের কাছে বড় ধাক্কা, তেমনই অন্যদিকে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির কাছে স্বস্তির। কারণ, অ-বিজেপি রাজ্যগুলি বারবার অভিযোগ করেছে, নিজেদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করছে মোদী সরকার। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, “আইন অনুযায়ী কেন্দ্র রাজ্যের সম্মতি ছাড়া সিবিআইকে কোনও মামলায় যুক্ত করতে পারে না। এই ধরনের কোনও নির্দেশ দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মতি বাধ্যতামূলক। কারণ সংবিধানে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা বলা হয়েছে সেই কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই আইন করা হয়েছে। সেই আইন বদলের কোনও এক্তিয়ার কেন্দ্রের নেই।”
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এম খানউইলকর ও বিচারপতি বি আর গভাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। রায়ের সময় উল্লেখ করা হয়েছে দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্টের কথা। এই অ্যাক্ট অনুযায়ী সিবিআইকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে গেলে তাদের সম্মতি বাধ্যতামূলক করেছে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, রাজস্থান, কেরল ও মিজোরাম, এই আটটি বিরোধী শাসিত রাজ্য। সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে হওয়া একটি মামলার রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে মামলা করা হয়েছিল।উত্তরপ্রদেশের সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দেয়। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে কয়লা বিক্রিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আচমকা সেখানে সিবিআই হানা দেয়। জানা যায়, কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে চুক্তির ভিত্তিতে পাওয়া কয়লা বিক্রি করা হচ্ছে কালোবাজারে। নাম জড়ায় দুই অফিসারের।
এই মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, তদন্তের আগে রাজ্যের কাছে যে সম্মতি সিবিআই নিয়েছে তা যথেষ্ট। সিবিআইয়ের চার্জশিটেও ওই দুই অফিসারের নাম রাখা হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে সিবিআই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই অফিসাররা। তাঁদের আইনজীবী দাবি করেন, তদন্তের জন্য সিবিআই উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে যে সম্মতি নিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। কারণ সিবিআই তদন্তের জন্য রাজ্যের থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হয় সংস্থাকে। তা তারা নেয়নি। সেই মামলাতেই এদিন এই রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত।