সেই যে ২ মে ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে তারপর থেকে তাঁর আর দেখা মেলেনি কলকাতায়। মাঝে বিজেপির পর্যালোচনা বৈঠকে জেপি নাড্ডার ভার্চুয়াল ভাষণের সময়ে তাঁকে এক ঝলক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে যে ভাবে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে দেখতে অভ্যস্ত ছিল বাংলার রাজনৈতিক মহল তা দেখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ তাঁর দেখা মিলেছিল দিল্লিতে। বাংলার বিজেপি সাংসদদের বৈঠকে।
ভোটের পর বাংলায় দলের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি কৈলাসকে। মঙ্গলবার দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে বাংলার বিজেপি সাংসদদের বৈঠকে কৈলাসের উপস্থিতি নিয়ে তাই স্বাভাবিক ভাবেই চর্চা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলা ওই বৈঠকে কৈলাসের সঙ্গে ছিলেন শিবপ্রকাশ ও অমিত মালব্য-ও।
যদিও বিজেপির একটি সূত্রের খবর, কৈলাসের ওই বৈঠকে থাকার কোনও কথাই ছিল না। হঠাৎই তিনি চলে এসেছিলেন। যা নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে বাংলার পর্যবেক্ষক ছিলেন মধ্যপ্রদেশের এই নেতা। খাতায় কলমে এখনও তিনিই বাংলার প্রধান পর্যবেক্ষক। বাংলাকে কার্যত ঘর-বাড়ি করে ফেলেছিলেন তিনি। হারের পর স্বাভাবিকভাবে তাঁর দিকে আঙুলও উঠেছে। বিজেপিতে কৈলাসের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ নেতা ছিলেন মুকুল রায়। দেখা যেত যেখানে মুকুল সেখানে কৈলাস। কিন্তু কৈলাসের ‘মুকুলদা’ও ফিরে গিয়েছেন পুরনো দলে। অনেকের মতে, যা কৈলাসের পক্ষে অস্বস্তির কারণ।
ভোটের পর থেকেই তথাগত রায়ের মতো বর্ষীয়ান বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যেই কৈলাসকে তুলোধনা করেছিলেন। বলেছিলেন, যাঁরা বাংলার মাটি চেনেন না তাঁরা ভেবেছিলেন অন্য দল থেকে নেতা ভাড়া করে এনে ভোটে জিতবেন। নিজেদের মতো করে প্রার্থী করেছেন, দুর্দিনে বিজেপি করা লোককে গুরুত্ব দেননি—আর যখন দল হেরে গেছে তখন উনি পালিয়ে গিয়েছেন। তথাগতবাবু এও বলেছিলেন, ভোটে হারের পর যখন রাজ্যের জেলায় জেলায় বিজেপি কর্মীরা আক্রমণের মুখে, খুন হচ্ছেন, তখন ‘ইন্দোরের নেতা ইনডোরে’ ঢুকে গিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির একাধিক নেতা কৈলাসের ভূমিকা নিয়ে বীতশ্রদ্ধ। সেটা বুঝেই ভোটের ফল প্রকাশের পর তিনি কলকাতা ছেড়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, ভোটের ফল প্রকাশের পর তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে। বিজেপিও নতুন করে শুরু করতে চাইছে। ঠিক তখনই দিল্লিতে বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক সারলেন কৈলাস।
বিজেপি সূত্রে খবর, কৈলাসদের উপস্থিতিতে গতকালের বৈঠকে বাংলায় তিনটি যাত্রা করার প্রাথমিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ভোটের পর যে বিজেপি কর্মীরা খুন হয়েছেন তাঁদের বাড়িতেও নেতারা পৌঁছবেন বলে স্থির হয়েছে।