পরপর মাটির মূর্তি। নিখুঁত হাতের টানে প্রাণ পাচ্ছে প্রতিমা। কলকাতার এক অন্য হেরিটেজের নাম কুমোরটুলি। এবার সেই কুমোরটুলির গায়েই তুলির টান।
নতুন বছরে নতুন রূপে সেজে উঠছে কুমোরটুলি। সামনেই বাংলার নতুন বছর। সেই দিনেই ব্র্যান্ড নিউ লুকে আত্মপ্রকাশ হবে শহরের পটুয়াপাড়ার। সৌজন্যে চার জন বিখ্যাত থিম মেকার এবং কুমোরটুলির জনা ত্রিশেক বিখ্যাত মৃৎশিল্পী। উদ্দেশ্য ওয়ার্ল্ড আর্ট ডে এবং বাঙালির নতুন বছরের জোড়া সেলিব্রেশন।
কুমোরটুলি মানে দুর্গা ঠাকুর, ঢাকের বাদ্যি, পুজো পুজো ভাবে। এই সমস্ত বিষয়টিকে রেখেই পটুয়াপাড়াকে আরও প্রাণোচ্ছল করতে চলেছেন সুশান্ত পাল, পার্থ দাসগুপ্ত, সুমন চৌধুরী, সোমেন্দ্র মজুমদারের মতো শিল্পীরা। ইতিমধ্যেই কুমোরপাড়ার নতুন লুক অনেকটাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। হয়তো এক সপ্তাহ আগেই কেউ উত্তর কলকাতার বনমালী সরকার স্ট্রীট দিয়ে গিয়েছেন। সেই রাস্তা এই সপ্তাহে বা নতুন বছরের আগে গেলে চিনতে অসুবিধা হতেই পারে।
পটুয়াপাড়ার খোলসটাই পুরো বদলে গিয়েছে শিল্পীদের হাতে। কুমোরপাড়ার স্টুডিয়োয় শুধু রঙে এলোমেলো দাগ নয় , পুরো পাড়াটাই হয়ে উঠেছে রঙিন। বিভিন্ন রকমভাবে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন শিল্পীরা। একটি হলুদ ট্যাক্সি পড়েছিল। সেটিকেও ক্যানভাস হিসাবে ব্যবহার করেছেন তাঁরা। বাড়িতে ভাড়া বেঁধে উঠে রঙ তুলি চালাচ্ছেন শিল্পীর দল।
শিল্পী সুশান্ত পাল বলেন , “এখানে কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নেই। কুমোরটুলি আমাদের কাছে একটা ক্যানভাস। তার উপর আমরা আঁকছি। তবে কুমোরটুলির যে নিজস্বতা রয়েছে, একটা ‘essence’ রয়েছে সেটাকে বাঁচিয়ে রেখে আমরা কাজ করছি।” একইসঙ্গে তিনি বলেন , “কুমোরটুলি রঙ তুলির জায়গা, শিল্পের স্থান। তবু সেটা অনেক দিক থেকে বেরঙিন হয়ে রয়েছে। মানুষ যদি একটু রঙচঙে কুমোরটুলি দেখে তাহলে মানুষের ভালো লাগবে। আর তার সঙ্গে বিশ্ব আর্ট দিবস সেই বিষয়টাও ফুটিয়ে তোলা যাবে।” শিল্পীর কথায় , “একটা ফেস্টিভ মুড আমরা তৈরি করতে চাইছি। অবশ্যই সেটা এখানকার শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে। ওঁরাও আমাদের কাজে হাত দিয়েছেন। নবকুমার পাল, মিন্টু পাল, পরিমল পাল, চায়না পাল, সুস্মিতা পাল, মালা পাল উল্লেখযোগ্য নাম।”
গত দুই সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা করে এক সপ্তাহ ধরে মাঠে নেমে কাজ করছেন শিল্পীরা। যার ফল মিলবে ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল। ওই দুই দিনে একটা ভিডিও ডিসপ্লে করার পরিকল্পনা রয়েছে, সঙ্গে থাকবে আবহসঙ্গীত। শিল্প দিবস এবং বাংলার নতুন বছরকে সামনে রেখে বেশ কিছু লাইভ পারফর্মেন্স হবে।
মৃৎশিল্পী ভাস্কর জি. পাল তাঁর পুরনো কিছু কাজ দিয়েছেন শিল্পীদের। বিষয়টিকে আরও সুন্দর করতে তাঁরা বিভিন্ন ভাবে সেগুলিকে ব্যবহার করবেন। আলোকচিত্র শিল্পী তপন পাল তাঁর তোলা পুরনো কুমোরটুলির বেশ কিছু ছবি দিয়েছেন। সেগুলি দিয়ে কুমোরটুলিতেই একটি ছবির প্রদর্শনীও হবে আগামী রবি ও সোমবার।
শিল্পীদের কি লাভ হবে? সুশান্ত পাল বলেন, “এটা কারও একার লাভ হবে না। দুই পক্ষের শিল্পের আদান প্রদান হবে। কুমোরটুলির শিল্পীরা যেমন আমাদের সঙ্গে কাজ করে মর্ডান আর্টের বিষয়ে জানবে শিখবে তেমন আমরাও কুমোরটুলির যে প্রথাগত শিল্পধারা সেটা আমরা শিখব।” দু’য়ের মেলবন্ধনে শিল্প, সৃষ্টির উল্লাস হতে চলেছে শহরের বুকে তা বলা যেতে পারে।