বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় বোল্ডার বোঝাই ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে মারা গেছেন অন্তত ১৪ জন। ধূপগুড়ির এই মর্মান্তিক ঘটনায় কাল রাত থেকেই শোকের ছায়া। এবার এ নিয়ে নিজে টুইট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিজনদের ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলিকে সব রকম সাহায্য করবে কেন্দ্র।
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। একট জেলার দুর্ঘটনায় এই ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করে মোদী রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও বিজেপি নেতাদের দাবি, এত বড় একটা শোকের ঘটনায় যা করার কথা তাই করেছেন মোদীজি। তৃণমূল সবেতেই রাজনীতির ভূত দেখছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কনেযাত্রীর তিনটি ছোট গাড়ি যাচ্ছিল ময়নাতলি এলাকায়। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা থাকায় গাড়িগুলি যাচ্ছিল উল্টোদিকের লেন ধরে। অন্যদিকে সেই লেন ধরেই আসছিল ১০ চাকার একটি বোল্ডার বোঝাই ট্রাক। সেটি যাচ্ছিল ময়নাগুড়ির দিকে। একই লেনে হওয়ায় কনেযাত্রীর একটি গাড়ির সঙ্গে ট্রাকটির ধাক্কা লাগে। তাতে সেটি কাত হয়ে যায়। সেই সময় কনেযাত্রীর আরও দুটি গাড়ি পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ট্রাকের তলায় চাপা পড়ে গাড়ি দুটি।
আরও পড়ুন: ধূপগুড়ির দুর্ঘটনায় সন্তান-সহ পরিবারের সাত জনের মৃত্যু, হাসপাতালে একা শিশু কাঁদছে মায়ের জন্য
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যক্ষদর্শীরা খবর দেন পুলিশে। সেখানে পৌঁছয় ধুপগুড়ি থানার বিশাল টিম। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। কিন্তু বোল্ডার তুলে উদ্ধারকাজ করতে অনেক সময় লাগছিল। বেশ কয়েকটি ক্রেনও নিয়ে আসা হয়। ঘটনাস্থলেই তিন শিশু-সহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও দু’জনের।
এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৬ জন। তাদের ধূপগুড়ি হাসপাতাল ও জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাদের দেখতে যান জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব, ধূপগুড়ির বিধায়ক মিতালী রায় ও এসডিও। আহত ও মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। চিকিৎসার যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা খতিয়ে দেখেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে কনেযাত্রীর গাড়িগুলি উল্টোদিকের লেন দিয়ে যাচ্ছিল। তাই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আজ, বুধবার সকালেই মোদী টুইট করে লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি এলাকায় ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। শোকার্ত পরিবারগুলির জন্য প্রার্থনা করি। আহতরা তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন। পশ্চিমবঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। আহতরা মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে পাবেন প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে।”
অন্যদিকে, আজ ধূপগুড়িতে জনসভার কথা আছে বিজেপির। সে জন্য মঙ্গলবার রাত থেকে ফুলবাড়ি এলাকায় রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি আজ সকালেই ধূপগুড়ি গিয়ে পৌঁছন।
পাশাপাশি, আজ সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। গোটা ঘটনার জন্য মোটর ভেহিক্যাল্স বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। কোনও নিয়ম না মেনেই যত ইচ্ছে গাড়ি চলছে মাল বোঝাই করে। এতেই বিপদ বাড়ছে বলে দাবি তাঁর। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীও নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন ধূপগুড়ির ঘটনার। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করে আসেন।