দিনকয়েক আগেই দুই বাংলাদেশি অভিনেতা ফিরদৌস ও নুরকে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের প্রচারসভায়। আর তারপরেই এই দুই অভিনেতাকে আইন ভাঙার শাস্তি স্বরূপ ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে নির্বাচনী প্রচারসভায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তুলে আনলেন এই প্রসঙ্গ। সরাসরি নাম না নিয়ে তিনি বলেন, তুষ্টিকরণের রাজনীতি করতে বিদেশ থেকেও প্রচারের লোক নিয়ে আসছে তৃণমূল।
মঙ্গলবার তৃতীয় দফার ভোটে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বালুরঘাট। তাই ভোটের ঠিক আগেই এখানে নির্বাচনী প্রচার সারলেন মোদী। নিজের বক্তব্যের শুরু থেকেই মোদীর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন দিদি। একের পর এক ইস্যু নিয়ে মমতাকে আক্রমণ করেন মোদী। এই সময়েই তিনি তুলে আনেন ফিরদৌস এবং নুরের প্রসঙ্গ। সরাসরি নাম না নিলেও তিনি বলেন, “তুষ্টিকরণের রাজনীতি করতে বিদেশ থেকে প্রচারের লোক নিয়ে আসছে তৃণমূল। এ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দিচ্ছেন মমতা। মনে আছে কয়েক বছর আগে দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে খাগরাগড়ে কী হয়েছিল? সেই সন্ত্রাসবাদী হামলাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মমতা। আর আমরা পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিদের মেরে আসি।” মোদীর এই বক্তব্যের পরেই উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের গলায় শুধুই মোদী মোদী চিৎকার।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ফিরদৌস এবং নুর দু’জনে একে বাংলাদেশি অভিনেতা, তার উপর আবার সংখ্যালঘু। এমনিতেই বিজেপি বারবার আক্রমণ করে বলে, মুসলিম তোষণের রাজনীতি করছেন মমতা। আর তাই এই দুই অভিনেতাকে প্রচারে এনে মমতা বাংলার মুসলিম ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে চেয়েছেন, এমনটাই অভিযোগ করলেন মোদী। পর্যবেক্ষকদের আরও মতে, খাগরাগড় প্রসঙ্গ তুলে এনেও তৃণমূল সুপ্রিমোকে আক্রমণ করলেন মোদী। এই বিস্ফোরণে বাংলাদেশের জামাত জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগ ছিল। একদিকে যখন বাংলাদেশের জঙ্গিরা এ রাজ্যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, অন্যদিকে তখন বাংলাদেশের অভিনেতাদের নিয়ে এসে মুসলিম তোষণের চেষ্টা করছেন মমতা, এই সমীকরণটাই বাংলার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে এটাও তুলে ধরলেন, দেশের সুরক্ষার প্রসঙ্গে সবসময় সবার থেকে আগে মোদী সরকার। কারণ পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিদের মারার ক্ষমতা তাঁর সরকারেরই আছে।
দিন কয়েক আগে রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে রোড শো এবং সভা করেছিলেন বাংলাদেশি অভিনেতা ফিরদৌস। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। প্রশ্ন ওঠে কী করে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ‘বিজনেস ভিসা’ নিয়ে ভারতে এসে রাজনৈতিক কর্মসূচি করেন? বিজেপির অভিযোগে নড়চড়ে বসে কমিশন। বিদেশমন্ত্রক ব্ল্যাক লিস্টেড করে দেয় ফিরদৌসকে। নোটিস পাঠিয় বলে দেয় দেশ ছাড়তে হবে। ফিরদৌসের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরের দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আরেক বাংলাদেশি অভিনেতা নুরের ছবি। দেখা যায়, দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে কামারহাটি এলাকায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে রোড শো করছেন জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিক রানি রাসমণির লিড চরিত্র ‘রাজচন্দ্র।’ তারপরেই তাঁকে ভারত ছেড়ে বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাঁর ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে গিয়েছিল। সেক্ষত্রেও তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, এমনটাই জানা গিয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনার পর নির্বাচনী প্রচারসভা থেকে এ বিষয়ে একটা লাইনও খরচ করেনি তৃণমূলের কোনও নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন বিষয়ে মোদীকে আক্রমণ করলেও তুলে আনেননি এই প্রসঙ্গ। কিন্তু বাংলায় প্রচারে এসেই এই বিষয় নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করলেন মোদী। এখন দেখার এই বিষয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া আসে কি না।