গত বুধবার রাজ্যে প্রথমবারের নির্বাচনী প্রচারে এসে শিলিগুড়ি ও ব্রিগেড থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে যে আক্রমণ মোদী করেছিলেন, রবিবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে সেই আক্রমণের ঝাঁঝ বেড়ে গেল বেশ কয়েকগুণ। এ দিনের সভা থেকে সারদা-নারদা-রোজভ্যালি কেলেঙ্কারির জন্য সরাসরি মমতা সরকারকে দুষলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, “গোটা দেশ মা সারদাকে পুজো করে, বাংলায় সেই সারদাকে কেলেঙ্কারির নাম দিয়েছেন দিদি। গোটা দেশ ‘রোজ’ বলতে ফুল দেওয়া নেওয়া করে, এ রাজ্যে ‘রোজ’ হলো কেলেঙ্কারির কাঁটা। নারদ বলতে নারদ মুনি ত্রিলোকে পুজিত হন, সেই নারদকে বাংলায় কেলেঙ্কারিতে নামিয়ে এনেছেন দিদি।”
এ দিন সভার শুরু থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা কীভাবে রাজ্যের মানুষকে পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছেন মমতা, সে কথা তুলে ধরেন মোদী। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প, প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে আনেন তিনি। তারপরেই আনেন চিটফান্ড প্রসঙ্গ। আর চিটফান্ড প্রসঙ্গ তুলে আনতেই উপস্থিত জনতার চিৎকার বলে দিল, এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে চায় বাংলার মানুষ। এর আগের দুই সভায় চিটফান্ড নিয়ে একটা কথাও খরচ করতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু এ দিন এই বিষয়ে তিনি সরব হলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
চিটফান্ড দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে বারবার সরব হয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতারা বারবার দাবি করেছেন, সিবিআই তদন্ত করে দ্রুত এইসব কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকা তৃণমূল নেতাদের শাস্তি দেওয়া হোক। কেন্দ্রের তরফে বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় অনেকবার রোজভ্যালির আমানতকারীদের বিক্ষোভে যোগ দিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, তদন্ত হবে, দোষীরা শাস্তি পাবে। কোচবিহারের সভা থেকে বিজেপির সেই দাবিকেই আরও একবার তুলে আনলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, “এইসব চিটফান্ডের টাকা কোথায় গিয়েছে? লুঠ হয়ে যাওয়া আপনাদের প্রত্যেক টাকার হিসেব এই চৌকিদার করবে।”
চিটফান্ড দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত বহুদিনের। যতবারই কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই বা ইডি এই সংক্রান্ত মামলায় পদক্ষেপ নিয়েছে, ততবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনেই কাজ করছে এইসব সংস্থা। এমনকী চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ব্যাপারে সিবিআই তদন্ত করতে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়ি গেলে সেখানে সিবিআই আধিকারিকদের আটকেছিল কলকাতা পুলিশ। কার্যত টেনে-হিঁচড়ে সিবিআই আধিকারিকদের নিয়ে যাওয়া হয় শেক্সপিয়ার সরণী থানায়। সিবিআইয়ের পদক্ষেপের নিন্দে করে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে ধর্ণায় বসেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তারপর শিলংয়ে সিবিআই দফতরে নিয়ে গিয়ে টানা পাঁচদিন জেরা করা হয়েছিল রাজীব কুমারকে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চিটফান্ড দুর্নীতিতে তৃণমূল নেতাদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা এখনও বাংলার সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে। কারণ এই কেলেঙ্কারির ফলে অনেকে তাঁদের সর্বস্ব খুইয়েছেন। অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। তাই ভোটের আগে সেই ঘটনাকে মানুষের মনে আরও বেশি করে ঢুকিয়ে দিতেই এ দিনের সভা থেকে চিটফান্ড প্রসঙ্গ তুলে আনলেন মোদী। এই অস্ত্রেই মমতা সরকারকে আঘাত করলেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চাইলেন, এমনিতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এই বিষয়ে তদন্ত করছে। কিন্তু মমতা সরকার ও প্রশাসন বারবার তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতা থাকলে বাড়লে সেটা করা অত সহজ হবে না, সব দুর্নীতির তদন্ত হবে, দোষীরা শাস্তি পাবে।