নারদ মামলার শুনানি বুধবারের মতো শেষ। পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার দুপুর দুটোর সময়। বুধবার আদালতে নারদ মামলার শুনানি চলে দু’টো থেকে চারটে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। এর ফলে আগামীকাল পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকতে হবে চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের। কিন্তু শুনানি বুধবারের মতো শেষ হয়ে যায়। হেভিওয়েটদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, সিবিএর-র তরফে মামলাটিকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে। অভিজিৎ মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “শীর্ষ আদালত যেখানে বলেছে দরকার না হলে কাউকে আটকে রাখা যাবে না। তাহলে কেন এই চার জনকে জেলে রাখা হয়েছে? এরা তো মামলায় সহযোগিতা করেছেন।” এদিকে সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহতা বলেন, “অভিযুক্তরা মামলা প্রভাবিত করছে। কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬ ঘন্টা সিবিআই দফতরে বসে ছিলেন?” সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, “বিক্ষোভ ও মুখ্যমন্ত্রীর সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার জন্য করোও জামিন স্থগিত হতে পারে না।” তবে অন্তর্বর্তী জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ কাল দুপুর দু’টো পর্যন্ত জারি রইল।
নারদ মামলায় (Narod Case) একদিকে সিবিআই (CBI) অন্যদিকে ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee), মদন মিত্র (Madan Mitra) ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (Sovon Chattopadhyay) আইনজীবীদের আলাদা আলাদা আবেদনের ভিত্তিতে নারদ মামলার শুনানি শুরু কলকাতা হাইকোর্টে (Kolkata High Court) দুপুর দু’টো থেকে।
বুধবার চার হেভিওয়েটের জামিন-স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনার শুনানিতে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জামিন হবে কি হবে না আমরা কেন সিদ্ধান্ত নেব? শুধুমাত্র মানুষের চাপের অভিযোগ ছিল বলে স্থগিতাদেশ দিয়েছি।”
এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “দেশের ইতিহাসে এরকম ঘটনা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নিজাম প্যালেসে ঢুকে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি করেন। অভিযুক্তদের ছেড়ে দিতে বলেন। নিজাম প্যালেসে ঢুকতে চেয়েছে বহু মানুষ। দুষ্কৃতীরা সিবিআই-র আধিকারিকদের ভয় দেখিয়েছে, তাই অভিযুক্তদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা যায়নি। আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক নিম্ন আদালতে সারা দিন উপস্থিত ছিলেন। এর ফলে বিচারকদের ওপর চাপ তৈরী হয়েছে। এরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। আগামীদিনে কাউকে গ্রেফতার করা হলে এই পরিস্থিতি তৈরী করা বা কৌশল নেওয়া হবে। এরা বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে । তাই এদের ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। আমি পুনর্বিবেচনার আবেদনপত্রের কপি আজ সকালে পেয়েছি। আমায় উত্তর দেওয়ার সময় দেওয়া হোক।”
এরপর তুষার মেহতার উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “চার্জশিট পেশ করা হয়ে গিয়েছে, এই ৪ জনকে আগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরা মামলায় অসহযোগিতা করেছেন এমন উদহারণ আছে কী? তাহলে এই করোনাকালে এঁদের শুধুশুধু জেলে রাখার প্রয়োজন আছে কি?” ধৃতেরা অসহযোগিতা করেছেন এমন কোনও উদাহরণ আছে কি না, তাও সলিসিটার জেনারেলের কাছে জানতে চান বিচারক।
জবাবে তুষার মেহতা (Tushar Mehata) বলেন, অভিযুক্তরা জেলে নেই, তাঁরা হাসপাতালে আছেন। তিনি যোগ করেন, “এই আদালত সিবিআইকে নিয়োগ করেছিল। তাদেরকেই কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাতে ন্যায্য বিচার না হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
পাল্টা হেভিওয়েটদের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি (Avishek Manu Singhvi) বলেন, “অভিযুক্তদের না জানিয়ে আদালতে মামলা হচ্ছে। তখন তাদের ন্যায় বিচারের কথা মনে ছিল না?” সিবিআই ছলে-বলে-কৌশলে এই চারজনকে জেলে ঢোকাতে চাইছে সিবিআই।” অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কাউকে বাধা দেননি। তিনি ও বাকি বিধায়করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদ করেছেন মাত্র । তাঁরা বিচারে বাধা দেননি, অশান্তিও করেননি।২০১১ সাল থেকে এরা মন্ত্রী, বিধায়ক । মামলায় সহযোগিতা করেছেন। মানুষ বিচার পাচ্ছে না বলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। নিম্ন আদালতের নির্দেশ যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়।” অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “কাউকে বিচারে বাধা দেওয়া হয়নি।” কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আইনমন্ত্রী আদালতে ছিলেন না।” অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “শীর্ষ আদালত বলেছে, “গুরুতর অভিযোগ না হলে কাউকে করোনার সময় গ্রেফতার না করতে। তাও এদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” বিচারপতি অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন করেন, নেতারা কর্মীদের বিক্ষোভ দেখানোর সময় কী ভূমিকায় ছিলেন” অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “নেতারা কর্মীদের সংযত থাকতে বলেন।” এর পর বিচারপতির প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে বলবেন? জবাবে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “পুরোটাই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ।” বিচারপতি রাজেশ জিন্দাল জানতে চান নেতাদের কী ভূমিকা ছিল? মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ উপস্থিতি কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সিঙ্ঘভি বলেন, “সিবিআই রাজ্যের অধীনে নয়। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিশের দফতরে গিয়ে বসে ছিলেন না।”