আসানসোলের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মুনমুন সেন। প্রার্থী হয়ে আসানসোলে এসে সাংবাদিক বৈঠকে শাড়ির আঁচল সরে যাওয়ার মত অশালীন অবস্থা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় তাকে ঘিরে। এরপর আবার হিন্দীভাষীদের উদ্দ্যেশ্যে মুনমুন সেনের করা মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তিনি হিন্দি ভাষী মানুষকে পুলিশের ইনফর্মার বলেছেন। রানীগঞ্জের অমৃতনগরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একটি সভায় মুনমুন সেন হিন্দি ভাষীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাদের “পুলিশের ইনফর্মার” কথাটি ব্যবহার করে বসেন। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। বলা হয় তিনি হিন্দি ভাষাভাষীদের অপমান করছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা বিশ্বনাথ যাদব বলেন, এই বক্তব্যে হিন্দিভাষীরা রীতিমত অপমানিত বোধ করছেন। পশ্চিম বাংলার উন্নয়নে হিন্দিভাষীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন সাংবিধানিকভাবে হিন্দি ভাষী ও বাংলাভাষী আলাদা কোন বিষয় নয়। সংবিধানের সবাই সমানভাবে সুযোগ পেতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে তারা কমিশনের দরবারেও যাবেন বলে ভাবছেন।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জিও মুনমুন সেনের করা এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন , “তিনি এই মন্তব্য করে আসানসোলে বসবাসকারী অবাঙালিদের অপমান করছেন।”
অন্যদিকে বিজেপির জেলার নেতা নিরঞ্জন সিং বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিন্দিভাষীদের ইনফর্মার বলায় তার নিন্দার ভাষা নেই। এই কারণে তৃণমূল কংগ্রেসকে কিন্তু ভোটারদের কাছে ভুগতে হবে।
২৫ তারিখ মুনমুন সেনের এই বক্তব্যকে ঘিরে বেশ তোলপাড় হয় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল। ঐ এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা করে টুইট করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের হয়ে প্রচারে এসে অবাঙালিদের উদ্দ্যেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিহারী ভাইরা তার অতিথি। আর এবারের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তাদের ইনফরমার বলেছেন। অতএব এর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের আসল রূপ প্রকাশ পাচ্ছে হিন্দী ভাষীদের জন্য।
তবে বিরোধীদের তোলা এই অভিযোগ সামাল দিতে ময়দানে নেমেছেন পাণ্ডবেশ্বর এর বিধায়ক ও আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। শাসক দলের হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যাট ধরেছেন মুনমুন সেনের পক্ষে। প্রার্থীর করা মন্তব্যের সামাল দিতে নিজের কথা এবং রাজ্যের আরো কয়েকজন হিন্দিভাষী নেতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, হিন্দি ভাষী বিতর্কে বিরোধীদের অভিযোগ এর কোন সারবত্তা নেই। তিনি বলেন রাজ্যের শাসক দল হিন্দিভাষীদের জন্য বহু উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। সরকারি যোজনা গুলি হিন্দিভাষী মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছেছে। হিন্দি ভাষীদের জন্য হিন্দি মাধ্যম হাইস্কুল, হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, জুনিয়ার হাই স্কুল গড়ে তুলেছে এই সরকার। এমনকি হিন্দিতে এমএ, এম ফিল, পিএইচডি করার সুযোগ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তৈরি হয়েছে হিন্দি ভবন। নিজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন কলকাতার পর বাংলার দ্বিতীয় বড় পৌরসভা আসানসোলের মেয়র করা হয়েছে তাকে। বেশ কয়েকজন বিধায়ক রয়েছেন যারা হিন্দিভাষী। তার দাবি মুনমুন সেনের বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে।
কিন্তু এই মন্তব্য ঝড় তুলেছে আসানসোল এলাকায়। এই এলাকাকে মিনি ইন্ডিয়া বলা হয় কারণ ঝাড়খন্ড, বিহার , উত্তর প্রদেশ এমনকি রাজস্থানের মানুষও এই এলাকার রয়েছেন। কয়েক দশক ধরে এখানে থাকতে থাকতে তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। এখানকার শিল্পাঞ্চলে তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৫২ শতাংশ ভোটার অবাঙালি। ফলে লোকসভা ভোটের আগে তাদের উদ্দেশ্যে করে এই মন্তব্যে ভোট বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলে তাই এখন দেখার।