আস্তিক-নাস্তিক , মুরতাদ- মুশরিক-মোমিন , বিলিভার-ননবিলিভার এবং অজ্ঞেয়বাদী বা অ্যাগনষ্টিক । এই পৃথিবীতে ,এই সমাজে সবার বাঁচার অধিকার আছে। একই পরিবারে, একই গৃহে সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব। আস্তিক বাপের নাস্তিক ছেলে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। প্রকৃতি বিশ্বাসী কিম্বা অবিশ্বাসী উভয়ের জন্যই সম পরিমাণ আলো,জল ,বাতাস বরাদ্দ করে। যাঁরা ঈশ্বর ,আল্লাহ কিম্বা গডে বিশ্বাস করেন তাঁদের এটা বোঝা উচিত তাঁদের নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তার যেহেতু নাস্তিক , মুরতাদ কিম্বা এথিষ্টকে নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই সুতরাং তাঁদেরও না থাকাটাই বাঞ্ছনীয়।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেই বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্রের গ্যারান্টি চাই যেখানে ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের জন্য কারও গলাকাটা যাবে না। আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও অধিক আগে বৌদ্ধ ,আজীবক সহ অজস্র প্রতিবাদী ধর্ম ও দর্শনের জন্ম ভারতে। প্রতিবাদী ধর্ম গুলি মূলতঃ বেদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিস্পর্ধি শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। প্রাচীন ভারতে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল বেদের বিরোধী বা বেদকে প্রামাণ্য হিসেবে স্বীকার করে না কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসী তাদের বলা হত নাস্তিক । আবার বেদকে প্রামাণ্য বলে মানে কিন্তু ঈশ্বর মানে না তাদের বলা হত আস্তিক ।
হিন্দু ধর্ম সহ সকল ভারতীয় ধর্মই চরিত্রগতভাবে নন রেজিমেন্টেড এবং বহু ভাবধারায় পরিপুষ্ট। হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদ যতটা নিন্দিত হওয়া উচিত ততটাই নন্দিত হওয়া উচিত এর বৈচিত্রের। ভারত কেন বহুত্ববাদী ? এই বহুত্ববাদ কি আকাশ থেকে ভারতের উপর পড়েছে ? আমাদের ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতির শেকড়ে বিবিধতা আছে দেখেই আমাদের সমাজ বহুত্ববাদী। এই বিবিধতা প্র্যাকটিস বা অনুশীলনের বিবিধতা। যেই সমাজে অনুশীলন বা চর্চার স্বাধীনতা থাকে সেই সমাজ উদার ও সহনশীল হতে বাধ্য ।
অথবা বলা চলে যেই সমাজ উদার ও সহনশীল সেই সমাজেই অনুশীলন বা চর্চার স্বাধীনতা আছে । এইজন্যই একজন যাদবপুর কিম্বা জেএনইউর মেধাবী পাসআউটের সামনে পরবর্তী গন্তব্য হিসেব যদি ইসলামিক রিপাবলিক ইরান অথবা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র অ্যামেরিকা এই দুটির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় তিনি দ্বিতীয়টিই বেছে নেবেন।
ভারতীয় সমাজে সমকামিতা যেভাবে গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে কিম্বা ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা যেভাবে সমকামিতাকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তানে,ইরান এমনকী মালয়েশিয়ায় সেটা সম্ভব ? কেন সম্ভব নয় আপনি যদি এই প্রশ্ন না তোলেন কিম্বা এই প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তবে আপনি সিলেক্টিভ প্লুরালিষ্টিক । আমরা যেন সেই ভারতবর্ষকে টিকিয়ে রাখতে পারি যেই ভারতবর্ষে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হবে না। আমরা যেন সেই ভারতবর্ষকে টিকিয়ে রাখতে পারি যেই ভারতবর্ষে মানুষ প্রশ্ন তোলার অধিকার হারাবে না। ভারতবর্ষ নচিকেতার দেশ। ভারতবর্ষ প্রশ্ন তোলার দেশ। ইসলামের মতো সর্বাত্মক ধর্ম বা টোটালেটেরিয়ান রিলিজিয়ন ভারতকে কোনও দিনই পুরোপুরি জয় করতে পারে নি বলেই ভারতবর্ষে জ্ঞান অর্জনের স্বাধীনতা , জ্ঞান চর্চার স্বাধীনতা অব্যাহত আছে। যেই সৌভাগ্য পারস্যের হয় নি ।