লড়াইটা যেন তৃণমূল বনাম বিজেপি নয়। তৃণমূলের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে একদা দলের সেকেন্ডম্যানের।
শুক্রবার রাতে কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সহ বাংলার চার পুলিশ কর্তাকে রাতারাতি বদলি করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ সরাসরি ভোটের দায়িত্ব থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে সে ঘটনা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে, কমিশনের কাছে কঠোর ভাষায় চিঠি লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করেছেন, বিজেপি-র পক্ষ নিয়ে কাজ করছে কমিশন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যে কমিশনকে ততোধিক কঠোর শব্দে চিঠি পাঠালেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
সেই চিঠির বক্তব্য ঠিক কী?
মুকুলবাবু দ্য ওয়াল-কে বলেন, বাম আমলে পেটোয়া পুলিশ কর্তাদের ভোটের দায়িত্ব থেকে সরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিতেন কমিশনকে। ওঁর সই করা সেই চিঠি বহুবার কমিশনকে দিয়েছি। তিনি জানান, কমিশনকে স্পষ্ট জানিয়েছি, বাংলায় ভোট নিরপেক্ষ ও অবাধ করার দায়িত্ব নির্বাচন সদনের। বছর খানেক আগে সীমান্তে সচেতনতা বাড়ানোর অরাজনৈতিক আলোচনা সভায় গিয়েছিলেন তৎকালীন বিসিএফের ডিজি কে কে শর্মা। সেই অনুষ্ঠানের ছবি দেখিয়ে যদি তাঁকে বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক পদ থেকে সরানো হয়, তাহলে সব ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানতে হবে। এক যাত্রায় পৃথক ফল হলে চলবে না। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক ধর্ণা মঞ্চে উপস্থিত থাকার কারণে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ও পুলিশের ডিজি-র পথ থেকে বীরেন্দ্রকেও সরাতে হবে।
এখানেই থামেননি তিনি। মুকুলবাবু আরও বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে কমিশন যেন প্রচলিত রীতি মেনে চলে সে ব্যাপারেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। নিয়ম হল, যে সমস্ত অফিসারকে অতীতে কোনও কারণে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের তত্ত্বাবধানে আর ভোট করানো যাবে না। তাঁর কথায়, “আমার স্পষ্ট দাবি, ২০১১, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে ভোটের সময় কমিশন যে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, তাঁদের এ বারও ভোটের দায়িত্ব থেকে সরাতে হবে। কেন না পক্ষপাতের অভিযোগের ভিত্তিতেই মূলত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ভোটের দায়িত্বে বহাল থাকলে এ বারও পক্ষপাতের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
চিটফান্ড কাণ্ডে গত ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন সিবিআই কর্তারা। কিন্তু তাঁদের বাধা দেয় রাজ্যের পুলিশ। পরে রাজীবের বাড়ি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে সোজা ধর্মতলায় ধর্ণা মঞ্চে গিয়ে বসেন তিনি। ওই ধর্ণামঞ্চে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ও ডিজি বীরেন্দ্রকে। কমিশনকে সেই ছবিও পাঠিয়েছেন মুকুলবাবু।
কমিশনকে দেওয়া মমতার চিঠি নিয়েও এ দিন প্রতিক্রিয়া জানান এই প্রবীণ বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, “বাংলায় গণতন্ত্র নেই। অধিকাংশ সৎ পুলিশ অফিসারকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে, পেটোয়া পুলিশ অফিসারদের দিয়ে ভোট করানোর চেষ্টা চলছে। সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না দেখেই নেত্রী বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। সাধারণ মানুষ যখন এটা বুঝতে পারছে, তখন আশাকরি কমিশনও সেটা বুঝবে।”