প্রতিদিন জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, বাংলায় বেকারত্ব কমেছে ৪০ শতাংশ। তৈরি হয়েছে এক কোটি কর্মসংস্থান। কিন্তু প্রথম দফার ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে মমতার সেই দাবিকে উড়িয়ে দিলেন একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কিছু যুবক যুবতীকে দু’হাজার, চারহাজার টাকা দিয়েছেন মমতা। আর এসএসসি, ডব্লিউবিসিএস সহ সমস্ত চাকরির প্রক্রিয়া দুর্নীতিতে ভরা। টানলেন কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারীর মেয়ের সেই চাকরি পাওয়ার প্রসঙ্গও।
কয়েকমাস আগে হেমন্ত বসু ভবনে লাল পতাকা রেখে দিয়ে তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে গিয়ে জোড়াফুলের ঝাণ্ডা হাতে তুলে নিয়েছিলেন পরেশ। তারপর ঘটে যায় ম্যাজিক। পরেশবাবুর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম উঠে যায় জেলার এসএসসি প্যানেলে। অভিযোগ, প্রথম তালিকায় ওয়েটিং-এ নাম ছিল না অঙ্কিতার। সেখানে এক নম্বরে নাম ছিল ববিতা বর্মন নামের এক তরুণীর। কিন্তু হঠাৎ পালটে যায় তালিকা। ববিতার নাম চলে যায় দুইয়ে। আর ফার্স্ট গার্ল হয়ে যান অঙ্কিতা। স্কুলের চাকরিতে যোগও দিয়ে দিয়েছেন পরেশ-কন্যা। এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর সমালোচনা হলেও টু শব্দটি করেননি পরেশ। তারপর তো দিদি একেবারে দিল্লি যাওয়ার ভোটের টিকিট দিয়ে দেন তাঁকে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুকুল কৌশলেই এ দিন পরেশ-কন্যার মেয়ের প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন। কারণ মঙ্গলবার শেষ প্রচার হয়ে গিয়েছে। এখন আর চোঙা ফুকে বলা যাবে না। কিন্তু ভোটের আগে জনতাকে আর ও একবার মনে করিয়ে দেওয়া, দেখো তৃণমূল মানে আসলে নিজের পরিবারের উন্নয়ন!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই নতুন কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন পরামর্শ দিয়ে দেন। কখনও বলেছেন তেলেভাজার দোকান করার কথা, তো কখনও বলেছেন পানের দোকান করার কথা। বছর কয়েক আগে হুগলির মহেশ্বরপুরের সভা থেকে সেলুন করার পরামর্শও দিয়েছিলেন দিদি। বাংলার বেকারত্ব ইস্যুতে এ বার সেই সেলুনকেই মমতার বিরুদ্ধে অস্ত্র করলেন মুকুল। তিনি মমতার চাকরি দেওয়াকে রবিবারের সেলুনে নাপিতের সঙ্গে তুলনা করেন। বুধবার জলপাইগুড়িতে মুকুল রায় বলেন, “বাংলার বেকার যুবকরা বেকারত্বের সঙ্গে যুঝছে। আর মমতার চাকরি দেওয়া হচ্ছে গ্রামের দিকে রবিবারের সেলুনে নাপিতের মতো।” এরপর গোটাটা ব্যাখ্যা করেন মুকুল। তাঁর কথায়, “রবিবার গ্রামের দিকে সেলুনে ভিড় হয়। নাপিত কী করে, এক গালে সাবান লাগিয়ে দেয়। যাতে খদ্দের পালাতে না পারে। মমতাও সে রকম এর হাতে দু’হাজার, ওর হাতে চারহাজার দিয়ে দিচ্ছেন।” ২০১১-২০১৯ পর্যন্ত একজন বেকারেরও চাকরি হয়নি বলে দাবি করেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী।
যদিও মুকুলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের এক নেতার কথায়, “বিজেপি শাসিত রাজ্যে প্রতিদিন কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। বেকারত্ব বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাংলায় এ সব নেই। তাই মুকুলবাবু হিংসায় এসব বলছেন! ২০১৭ পর্যন্ত তো উনি তৃণমূলেই ছিলেন। কই তখন তো কিছু বলেননি। গদ্দারদের কথা বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে না।”