মহাজোট তো-নয়, মহাঝুট, এই ঝুটের মহা-হার হবে, নির্বাচনি সমাবেশে মোদী

মহাজোট আর কিছু নয়, আসলে মহাঝুট, এই ঝুটের মহা-হার হবে। আজ বৃহস্পতিবার অসমের কোকরাঝাড়ে বিশাল নির্বাচনি জনসভায় কংগ্রেস-এআইইউডিএফের মহাজোটটকে এভাবেই নিশানা করে স্বভাবসিদ্ধ উদাত্ত ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, আজকের জনসভায় মানুষের জোয়ারই অসমে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মিত্রজোট সরকার হচ্ছেই এ-বিষয়ে তাঁকে নিশ্চিত করেছে। কোকরাঝাড় সমেত বোড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল রিজিওন (বিটিআর)-এর তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি-ইউপিপিএল জোটের প্রার্থীদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় অংশ নেন।

ভাষণের শুরুতে বড়ো ভাষায় উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, প্রথম দফার নির্বাচনে গণদেবতারা প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। এনডিএ-র জবরদস্ত বিজয় সুনিশ্চিত করেছেন জনতা। আজও দ্বিতীয় দফার ভোট খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, সারা দেশ জানে, অসমের যুবাদের মধ্যে ফুটবল খুবই প্রসিদ্ধ। ফুটবলের ভাষায় মহাজোট-কে অসমবাসী লাল কার্ড দেখিয়েছেন। তাঁর দাবি, এ-রাজ্যের মানুষের বিশ্বাস এনডিএ-র উপর রয়েছে, কংগ্রেসের উপর নয়।

এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাজোটের কর্মীরা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। কোকরাঝাড়ের মানুষের তা বুঝতে হবে। তিনি বলেন, মহাজোটের মহাঝুট বনাম বিকাশের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বলেন, জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, গ্যাসের মতো সুবিধাগুলির জন্য কংগ্রেস দীর্ঘকাল এখানকার মানুষকে বঞ্চিত করেছে। এনডিএ কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিটি সুযোগ সুবিধা প্রত্যেকের ঘরে পৌছে দিতে চাইছে। এমন-কি কংগ্রেস চা বাগানের শ্রমিক-কর্মীদের এতদিন কোনও খোঁজখবর করেনি। এখন মজুরি বৃদ্ধির গ্যারান্টি দিয়ে ছলনা করছে এরা। তবে এনডিএ সরকার চা বাগানের প্রত্যেকের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছে। জমি পাট্টা দেওয়া, মজুরি বাড়ানো, চা-বাগানের বোন-কন্যাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ, সব-কা বিশ্বাস নীতিতে এনডিএ সরকার কাজ করছে, দাবি করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এমন কোনও জনজাতি নেই যাঁদের সাথে কংগ্রেস বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। এনডিএ সরকার কোচ, রাজবংশী, মরান, মটক, চুটিয়ার মতো রাজ্যের সকল বর্ণের স্বার্থে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ-জন্য নতুন উন্নয়ন কাউন্সিল গঠনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আমাদের প্রচেষ্টা সকল জনজাতির সম্মিলিত বিকাশ। এ-সব ব্যাপারে ধারাবাহিক কাজ চলছে। তাঁর কথায়, আমি সন্তুষ্ট যে ২০১৬ সালে আমরা বিটিআর-এ শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পূরণে আন্তরিক প্রচেষ্টা হয়েছে। কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসন এই অঞ্চলটিকে বোমা, বন্দুক এবং ব্লকেটর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এনডিএ অসমকে শান্তি ও উন্নয়ন দিয়েছে।

নরেন্দ্র মোদী বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার বিটিসি-কে কর্তৃত্ব দিয়েছিল। বর্তমান এনডিএ সরকার স্থায়ী শান্তির জন্য ঐতিহাসিক বড়ো চুক্তি করেছে। আজ বিটিআর প্রসারিত হয়েছে। বড়ো-দের সঠিক উন্নয়নের জন্য আমাদের মন্ত্র হল শান্তি, অগ্রগতি এবং সুরক্ষা, বলেন তিনি।

@@মোদী বলেন, বিগত বছরগুলিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিশেষভাবে বিটিআরের জন্য দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় বহু প্রকল্পে কাজ চলছে। কোকরাঝাড়ে মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণকাজ দ্রুত চলছে। দেড়শো কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাষা, ঐতিহ্য, পরিচিতির সুরক্ষাও আমাদের সংকল্প, একে আমরা আমাদের দায়িত্ব হিসাবে বিবেচনা করি।

তাঁর কথায়, বোডোফা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মের নামে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স এবং সেন্টার ফর এক্সিলেন্স নির্মাণ করা হচ্ছে যা এই জায়গার গর্বকে বাড়িয়ে তুলবে। অষ্টম তফশিলি অনুযায়ী বড়ো ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ করা হয়েছে। আমরা বড়ো সমাজের পরিচিতি সুরক্ষিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর দাবি, শান্তি ও উন্নয়নের এই সংকল্পের কারণে সদ্যসমাপ্ত বিটিআর নির্বাচনে জনতা জনার্দন বিজেপি এবং ইউপিএলকে তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, কাউন্সিল নির্বাচনে বিজেপি মিত্রজোট যে সমর্থন পেয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনে আরও বেশি সমর্থন পাবে।

তিনি দাবি করেন, দীর্ঘদিন পর অসমে শান্তি ফিরে এসেছে। তাঁর কথায়, যারা বন্দুক ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে তাদের কল্যাণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি অন্যান্য উগ্রবাদীদেরও মূল স্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোকরাঝাড়ের যুবক-বোনেরা সহ প্রতিটি নাগরিক সহিংসতার পর্বটি ভুলেননি। সেই সময়কালে দিল্লি থেকে গুয়াহাটির তামাশা দেখা হতো।

তিনি বলেন, আজ তারা মহাজোট করে বড়ো জনগণকে ঠকানোর জন্য নেমেছেন। ক্ষমতা অর্জন এবং তার অস্তিত্ব বাঁচানোর চেষ্টায় অসমে কংগ্রেস এআইইউডিএফ সাথে হাত মিলিয়ে বড়ো-দের সহিংসতার আগুনে ঠেলে দিচ্ছে। একটি ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অসমের পরিচিতি গামোছা-কে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে, রাজ্যবাসী এই দৃশ্য দেখে খুব ক্ষেপে গেছেন। তাঁর পরামর্শ, কংগ্রেসের মিথ্যাচার এবং এদের ষড়যন্ত্র বুঝুন। তারা ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য নিজেকে এআইইউডিএফ-এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কংগ্রেস কেবল এই অপমানের শাস্তি পাবে না, মহাজোটও পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসমের এই শান্তি আমাদের সকলের দ্বারা খুব কষ্টে অর্জিত হয়েছে। ফলে যে কোনও পরিস্থিতিতে কংগ্রেস এবং তার সহযোগীদের দ্বারা লুটপাটের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসমের উন্নয়নের জন্য ডাবল ইঞ্জিনের সরকার খুবই প্রয়োজন। বলেন, অসমে রেল, সড়ক, বিমান যোগাযোগ দ্রুত বাড়ছে। দরিদ্ররা একটি স্থায়ী বাড়ি পাচ্ছেন। একইভাবে, প্রতিটি পরিবার টয়লেট সুবিধার সাথে যুক্ত হয়েছে। এখন প্রতিটি বাড়ি জলের সাথে যুক্ত হচ্ছে। ২ মে-র পর পাইপ দিয়ে ঘরে জল সরবরাহ করবে বিজেপি সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি উপকার হবে মহিলাদের।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার নারীদের জন্য দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে। অসম সরকারও দ্রুত গতিতে কাজ করছে। তাঁর কথায়, নারীদের কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক কলেজ খোলা হয়েছে। তাঁর দাবি, অসমে পড়াশোনা, সেচ, উপার্জনের জন্য কাজ করা হয়েছে। কৃষিকাজের জন্যও প্রচুর কাজ করা হয়েছে। আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। কৃষক উৎপাদক সংস্থা গঠিত হচ্ছে। বাঁশ ও বেতের কর্মসংস্থানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এনডিএ প্রার্থীদের বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.