বছর দেড়েক আগেও ছবিটা অন্যরকম ছিল। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে মাঝে মধ্যেই দিল্লিতে ডেকে পাঠাতেন জেপি নাড্ডারা। আর মুকুল রায়ও সময়ান্তরে গিয়ে অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করতেন।
ভোটে বিপর্যয়ের পর দৃশ্যত সেই ছবিটা বদলে গেল। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিল্লিতে ডেকে পাঠালেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। কিন্তু রাজ্য বিজেপি সভাপতি বা মুকুল রায় এমনকি কৈলাস বিজয়বর্গীয় পর্যন্ত ডাক পেলেন না।
তা হলে কি বদল অনিবার্য রাজ্য বিজেপিতে?
সর্বভারতীয় বিজেপির এক নেতার কথায়, এই উত্তর সন্ধানের আগে দুটি বিষয় বুঝতে হবে। এক, যে কোনও নির্বাচনের পরই জয়ী বা পরাজিত দলে সাংগঠনিক বদলের সম্ভাবনা থাকে। যাঁরা সাংগঠনিক সাফল্য দেখাতে পারেন তাঁরা পুরস্কার পান। যাঁরা ব্যর্থ হন, তাঁদের সরিয়ে নতুন মুখ আনা হয় সংগঠনে। ফলে তৃণমূলে যেমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান হয়েছে, বিজেপিতেও তেমনই বদল অনিবার্য। সেটা কবে, কখন, কীভাবে হবে সেটা দল স্থির করে। দুই, শুভেন্দু বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা। সংগঠনের দায়িত্ব তাঁর উপরে নেই। তার পরেও দিলীপ-মুকুলদের পরিবর্তে তাঁকে দিল্লিতে ডেকে নেওয়া প্রাসঙ্গিক বইকি। এমনকি কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের না ডাকাও প্রাসঙ্গিক।
রাজ্য বিজেপির অন্দরে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাংশ নেতা বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছেন। দলের দুই সাংসদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, রাজ্য সভাপতি পদে বদল প্রয়োজন। শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতার পাশাপাশি রাজ্য সভাপতিও করে দেওয়া হোক। ভোটের সময়ে দিলীপ ঘোষের বহু মন্তব্য কীভাবে দলের সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তাও তাঁরা জানিয়েছেন মোদী শাহকে। এই বিষয়টি পৃথক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ও পর্যালোচনা করে দেখেছে।
সর্বভারতীয় বিজেপির এক নেতার কথায়, কেন্দ্রীয় সংগঠনের তরফে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক বদল করার সম্ভাবনা প্রবল। তা ছাড়া শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেননদেরও বাংলা থেকে তুলে নেওয়া হতে পারে। তবে শুভেন্দুকেই রাজ্য বিজেপির সভাপতি করার সম্ভাবনা কম। কারণ, বিজেপিতে এক ব্যক্তি এক পদের সূত্রই মেনে চলা হয়। তা ছাড়া শুভেন্দু মাত্র পাঁচ মাস আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে এখনই তাঁকে রাজ্য সভাপতি করলে পুরনো নেতা কর্মীরা তা কীভাবে গ্রহণ করবেন সেও প্রশ্ন। সেক্ষেত্রে হতে পারে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর থেকে কম ওজনদার কোনও নেতাকে রাজ্য সংগঠনের সভাপতি করা হতে পারে। অর্থাৎ রাজ্য বিজেপিকে শুভেন্দুই হয়তো নেতৃত্ব দেবেন আর সংগঠনের মধ্যে ভারসাম্য থাকবে। সেই পরিস্থিতিতে হয়তো দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। দলের ওই কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, প্রকৃতপক্ষে যাই হোক, মোদী-শাহ রাজ্য বিজেপির নেতা কর্মীদের কাছে একটা বিষয় হয়তো স্পষ্ট করে দিতে চাইলেন যে এখন থেকে তাঁরা যা নির্দেশ বা পরামর্শ দেবেন তা শুভেন্দুর মাধ্যমেই দেবেন।
শুধু রাজ্য সংগঠনে নয়, সূত্রের মতে জেলা সংগঠনেও বদলের সম্ভাবনা ষোল আনা। জেলা সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ-অসন্তোষ রয়েছে। এ নিয়ে আগেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুকুল রায়। ভোটেও অনেক জেলা সভাপতির সাংগঠনিক ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। এ বার তাই বদল অবধারিত।