সিঙ্গুর ও সাহাগঞ্জ—দুটি এলাকাই গঙ্গার পশ্চিম পারে। বাংলার শিল্প মানচিত্রে এই দুটো জায়গা যেন দুটি গভীর ক্ষতের মতো।
সোমবার সেই সাহাগঞ্জে বন্ধ ডানলপের মাঠে দাঁড়িয়ে বাংলাকে শিল্পায়ণের স্বপ্ন দেখাতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, বাংলায় আসল পরিবর্তন জরুরি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে শিল্পনীতিতে বদল আনবে। শিল্প সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া হবে। রাজনৈতিক বাধা দূর করা হবে। যাতে শিল্পায়ণ ত্বরাণ্বিত হয় এবং বাংলার ছেলেমেয়েরা কাজের সুযোগ পায়।
বাম জমানাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা। দুবাইয়ের ব্যবসায়ী মনু ছাবারিয়া তা কিনে নেন। কিন্তু কারখানাটি যে তাঁর চালানোর উদ্দেশ্যই ছিল না তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যায়। পরে তৃণমূল জমানায় হাতবদল হয়ে যায় পবন রুইয়ার কাছে। তখনও ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণাই সার হয়। রুইয়ারাও কারখানা চালানোর চেষ্টা করেননি বিন্দুমাত্র।
ডানলপ থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে সিঙ্গুর। সেই মাঠের ছবি আরও ভয়াবহ। না হয়েছে সেখানে শিল্প, না হচ্ছে সেখানে উল্লেখযোগ্য কৃষিকাজ। বিরোধীরা বলেন, বাংলায় ভারী শিল্পের স্বপ্নকে যেন কবর দেওয়া হয়েছে সিঙ্গুরের মাঠে।
এই দুই ক্ষতকে পুনরায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতেই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর সভার আয়োজন সাহাগঞ্জের মাঠে করেছিল বিজেপি। এদিন সেই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই সমৃদ্ধ ছিল বাংলা। হুগলি জেলায় তথা গঙ্গার পশ্চিম পাড় শিল্প কারখানায় গম গম করত। লোহা, ইস্পাত, চটের কারখানায় কত শ্রমিক কাজ করতেন। বাংলায় লোক সঙ্গীতেও সে সব শোনা যেত। এখন বাংলার ছেলেমেয়েদের কাজের খোঁজে যেতে হয় ভিন রাজ্যে। কারণ এখানে কাজের কোনও সুযোগ নেই। শিল্প পত্তনের সম্ভাবনার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি।
বাংলায় বর্তমান সরকারের জমি নীতিই যে শিল্প স্থাপনের পথে বড় অন্তরায় তা অনেকেই বলেন। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দর্শনই হল জোর করে কৃষি জমি নেওয়া যাবে না। এক সময়ে রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কিন্তু তিনিও তখন মমতাকে জানিয়েছিলেন, সরকারের এই জমি নীতিই শিল্পায়নের পথে অন্যতম বাধার কারণ। শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বোঝাতে চান, আসলে এখানে বাধা বহুবিধ। বাংলায় শিল্প সহায়ক পরিবেশ নেই। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চক্র, কাটমানি ইত্যাদি নেতিবাচক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আসার পথ সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই বদল চাই। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, তিনি আঁচ করতে পারছেন যে, মানুষ সে ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছে।