সরকারি অর্থ তছরুপ, গ্রেফতার পঞ্চায়েত কর্মীর স্ত্রী

১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের কোটি কোটি  টাকা তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন পঞ্চায়েত কর্মীর স্ত্রী। তাঁর স্বামী সুকান্ত পাল গ্রেফতার হয়েছেন আগেই। তাঁদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাঁশরা গ্রামে। সুকান্তর নামেও তছরুপের অভিযোগ আছে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাদ শুরু করতেই তছরুপ কাণ্ডে তাঁর স্ত্রী ঋষিতা পালের যোগসাজসের কথা জানা যায়। শুক্রবার রাতে পুলিশ ঋষিতাকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দামি চার চাকার গাড়ি ও আরও কিছু মূল্যবান সামগ্রী ।

সুকান্ত ২০০৭ সালে জামালপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটার অর্থাৎ ভিএলই পদে কাজে যোগ দেন। এই পঞ্চায়েতে সবচেয়ে বেশিদিন কাজ করার পর সুকান্ত ওরফে ফুলকুমার ট্রান্সফার নিয়ে চলে যান জামালপুর ব্লকের আঝাপুর পঞ্চায়েতে। মাসিক বেতন মাত্র ৭ হাজার টাকা হলেও গত কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বিত্তশালী হয়ে ওঠেন। পুরানো বাড়ি ভেঙে তৈরি করেন বিশাল অট্টালিকা। দামি আসবাবে ভরিয়ে ফেলেন বাড়ি। লক্ষ লক্ষ টাকার গয়নাও কেনেন পঞ্চায়েত কর্মীর স্ত্রী ঋষিতা। বহু মূল্যের চার চাকা গাড়ি চড়ে ঘুরতেন সামান্য বেতনের এই পঞ্চায়েত কর্মী।

ফুলকুমারের এত ধনী হওয়ার আসল রহস্য ধরা পড়ে যায় পঞ্চায়েতের অডিট চলার সময়ে। গত ২১ জানুয়ারি গা ঢাকা দেন ফুলকুমার।  ৬ ফেব্রুয়ারি জামালপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের একজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় জামালপুর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। একই অভিযোগ করেন আঝাপুর পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক ঘোষ। দীর্ঘ পাঁচ মাস গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ২৫ জুলাই তিনি বর্ধমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ২৯ জুলাই  জামালপুর থানার পুলিশ ফুলকুমারকে নিজেদের হেফাজতে নেয় । তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন  উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তারা । জেরায় উঠে  আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নথিতে অন্য লোকের নাম নথিভুক্ত করে ভিএলই ফুলকুমার তাঁর স্ত্রী, শিশুপুত্র ও নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন। সেজন্য তিনি ধনিয়াখালি ও পূর্ব বর্ধমানের মোট ছ’টি ব্যাঙ্কে স্ত্রী, পুত্র ও নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন।

পুলিশ কর্তাদের দাবি, সরকারি প্রকল্পের প্রায় দু’কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফুলকুমার ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ঋষিতার একাউন্টে  ঢুকেছে ৪০ লক্ষ টাকা। এই টাকার কোথায় তার সদুত্তর ঋষিতা দিতে পারেননি। সরকারী অর্থ তছরুপে অভিযুক্ত ঋষিতারও যোগসাজস রয়েছে সন্দেহ করেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ফুলকুমার যে ল্যাপটপ ব্যবহার করে তছরুপের কাজটি করতেন, সেটি পরীক্ষা করবেন বিশেষজ্ঞরা। তছরুপ করা অর্থে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত কর্মী যা কিছু কিনেছেন, সবই বাজেয়াপ্ত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.