মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বাংলার স্বরাষ্ট্র তথা পুলিশ মন্ত্রী। সোমবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁর সামনেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার শীর্ষ সারির মন্ত্রী– শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু।
অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের কথাই শুনছে না। একটা এফআইআর করতে গেলে বারবার বলতে হচ্ছে। বিশেষ করে নিচু তলার কিছু পুলিশ হয় ভয় পাচ্ছেন, নইলে ইচ্ছা করে কথা শুনছেন না!
অতীতে বাম জমানার শেষ দিকে এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল বাংলায়। তখন পার্টি মিটিংয়ে সিপিএম নেতাদের একাংশকে মহাকরণের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলতে শোনা যেত। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানের পরিস্থিতি যে হুবহু মিলে যাচ্ছে, তা হয়তো এখনই বলা যাবে না। তবে একটা যে মিল পাওয়া যাচ্ছে তা অস্বীকার করার উপায় কী?
নবান্ন সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় তাঁর আস্থাভাজন সদস্যদের থেকে এই অভিযোগ শুনে এ দিন অসন্তোষ চেপে রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর প্রথম রাগ গিয়ে পড়ে খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর উপরে। বীরেন্দ্রকে তিনি বলেন, “আপনি এত ভদ্র মানুষ হলে চলবে? কড়া হোন!”
সেই সঙ্গে তামাম পুলিশ কর্তার দিকে তাকিয়ে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা ব্যালেন্স মেনটেন করে চলেছেন। আমাকে রাগাবেন না। রাজ্যে বিজেপি অশান্তি করবে, আর আপনারা দায় এড়াবেন, এটা কী করে ভাবছেন? ভুলে যাবেন না, রাজ্যে শান্তি বজায় রাখা আপনাদের দায়িত্ব।”
তাৎপর্যপূর্ণ হল, মাত্র দু’মাস আগেই বাংলায় মুকুল রায়ের মতো অভিজ্ঞ বিজেপি নেতারা অভিযোগ করতেন, এ রাজ্যে পুলিশ দলদাস হয়ে গেছে। বাংলায় পুলিশ রাজ চলছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দৃশ্যত এখন উলটপুরাণ। এ দিন বিজেপি দফতরে মুকুলবাবুও সাংবাদিক বৈঠক করেন।
তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মুকুলবাবু জানান, বাংলার পুলিশমন্ত্রী হলেন মমতা। মন্ত্রী, বিধায়করা বলছেন পুলিশ কাজ করছে না, তাঁদের কথা শুনছে না। তা হলে এর পরে তো মমতার ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত। তাঁর কথায়, “পুলিশ যদি মন্ত্রীর কথা না শোনে, তা হলে সাধারণ মানুষের কথা শুনবে? এই অরাজক অবস্থার দায় মুখ্যমন্ত্রীর নয়?”
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মুকুলবাবু যে রাজনৈতিক আক্রমণ করবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল তথা সরকারের উদ্বেগ যে ক্রমশ বাড়ছে তা এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের ভিতরের ছবিতেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
সূত্রের খবর, বৈঠকে সন্দেশখালির ঘটনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আমরা সত্যিই অবাক। বলতে বাধ্য হচ্ছি, পুলিশ কোথাও ভয় পাচ্ছে ব্যবস্থা নিতে। এত দ্বিধা কেন! ভয়ই বা কীসের! আবার পরিবহণ ও সেচ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, আপনি নিচু তলার পুলিশ কর্মীদের জন্য এত ভাবেন, অথচ ওঁরা কথাই শুনছেন না।
এর পর আবার চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ একাধিক মন্ত্রী অভিযোগ করেন, রোজ তাঁদের মোবাইলে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ভূরি ভূরি এসএমএস করা হচ্ছে। এত এসএমএস আসছে, যে ফোনই ব্যবহার করতে পারছেন না। এ কথা শুনে আবার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রীও। মমতা জানান, তাঁর নামেও নাকি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
এর পরেই পুলিশ কর্তাদের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা করছেন কী? অ্যারেস্ট করুন।” সেই সঙ্গে পুলিশ সুপারদের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যে ভাবেই হোক পরিস্থিতি শুধরোতে হবে। যাঁরা অন্যের কথা শুনে ঠিকঠাক কাজ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সব কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।