এত দিন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নোট পাঠাচ্ছিল নবান্নকে। এ বার কাটমানি ইস্যুতে অমিত শাহের মন্ত্রক নোটিস পাঠাল রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-কে। সৌজন্যে লোকসভার অধিবেশনের জিরো আওয়ারে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাটমানি প্রসঙ্গে বক্তব্য।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত ৯ জুলাই পাঠানো চিঠিতে লিখেছে, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। সংসদের জিরো আওয়ারে যেহেতু বিষয়টি উঠেছে তাই এ ব্যাপারে একটা রিপোর্ট যেন রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে পাঠানো হয়। যদিও নবান্নর ওই চিঠির ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
গত পয়লা জুলাই লোকসভার অধিবেশনে কাটমানি ইস্যু নিয়ে তৃণমূলকে কার্যত তুলোধনা করেছিলেন লকেট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পরিবার টেনে বলেছিলেন, কালীঘাটের ফ্ল্যাট থেকে থাইল্যান্ড-এর সোনা- সবই হচ্ছে কাটমনির দৌলতে। এমনকী তিনি এ-ও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীই বলেছিলেন, দলকে ৭৫ শতাংশ দিয়ে নিজেরা ২৫ শতাংশ খাও। ওঁর কাছে কাটমানির ৭৫ শতাংশ আছে।”
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়দের প্রবল চিৎকারেও থামেননি অভিনেত্রী সাংসদ। বলেই গিয়েছিলেন। সেই ইস্যুতেই দিল্লি থেকে নোটিস এল নবান্নে।
সংসদের জিরো আওয়ার তথা শূন্য প্রহরে সাংসদরা নিজের এলাকার সমস্যা বা যে কোনও বিষয় উত্থাপন করতে পারেন। তবে বরাবরে প্রথা হল, রাজ্যের বিষয়আশয় এড়িয়ে চলা। কারণ, রাজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য পৃথক আইনসভা তথা বিধানসভা রয়েছে। সাংসদরা জিরো আওয়ারে কোনও সমস্যার কথা বললে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে হেতু কাটমানি সমস্যাটি একেবারেই রাজ্যের বিষয় এবং তা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত, তাই নবান্নের কাছেই রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন।
প্রশ্ন হল, আইনশৃঙ্খলা যখন রাজ্যের বিষয় তখন এ ভাবে এক জনকে সাংসদকে কি জবাবদিহি করতে বাধ্য নবান্ন? লোকসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, রাজ্যের বিষয় লোকসভায় উত্থাপন করাই যায় না। তবে বিজেপি-র পাল্টা যুক্তি রয়েছে। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন সরকারি প্রকল্প থেকে কাটমানি খাওয়া হচ্ছে। ওই সব প্রকল্পের বারো আনায় কেন্দ্র অনুদান দেয়। সুতরাং সংসদের জানার অধিকার রয়েছে।
এর আগে সন্দেশখালি, ভাটপাড়ার হিংসার ঘটনায় উপর্যুপরি নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই সময়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল তৃণমূল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কার্যত বিজেপির গণসংগঠনের মতো কাজ করছে।
লোকসভায় কাটমানি ইস্যু তোলার পর পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেছিলেন এ সব লোকসভায় বলে লাভ নেই। কিন্তু এই চিঠির পর অনেকেই বলছেন, বঙ্গ বিজেপির সাংসদদের উদ্দেশ্য ছিল, ব্যাপারটাকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরা। যেমন এক সময়ে বাম সন্ত্রাস নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় সরব হতেন। সেই উদ্দেশ্যে প্রাথমিক ভাবে লকেটরা সফল বলেই মত তাঁদের।