সেই ২০০৯ লোকসভা ও ২০১১ বিধানসভা নির্বাচন থেকে তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেক নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছেন এবং তাতে সফলও হয়েছেন। প্রধানতঃ  এদের ভোটেই সিপিএম সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই তিনিও সিপিএম লাইনে হেঁটে এদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা শুরু করেন, কিন্তু এদের নাগরিকত্বের দাবি কোনওদিনও মানেন নি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউপিএ সরকারের শরিক দল থাকলেও এদের জন্য একবারও মুখ খোলেন নি। এখন বিজেপি মতুয়ার সাথে অন্যান্য বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব পাওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে যখন এগিয়ে আসছে; ততই মমতা সে কাজে বাধা দিয়ে আসছেন।

তিনি ও তার দল সব রকম ভাবে এই আইন যাতে বাস্তবায়িত না হয়, তার জন্য প্রাণপাত করে গেছেন। একদিকে যেমন তৃণমূল যাতে আসামে ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন বা এনআরসি না হয়, সেজন্য খাটছেন; তার অজুহাত ছিল এর ফলে বাঙালি হিন্দুরা আসাম থেকে বিতাড়িত হবেন। অন্যদিকে রাজ্যসভায় যাতে এই বিল পাশ না হয়, সেজন্য তৃণমূল বিভিন্ন চালাকি করেছে; কোনওটাই সাফল্যের মুখ দেখেনি। সবাই বুঝতে পারছেন যে, এনআরসি বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতার পেছনে বাঙালি হিন্দুদের স্বার্থ দেখা নয় – কেবলমাত্র বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের স্বার্থ দেখার বাধ্যবাধকতা আছে, যারা এই মুহূর্তে তৃণমূলের একমাত্র সঞ্জীবনী ঔষধ হিসাবে টিকে আছে। এরাই পশ্চিমবঙ্গকে ১৯৪৭ সালের আগের অবস্থায় নিয়ে গিয়ে তাকে গ্রেটার বাংলাদেশের অঙ্গ বানাতে চায়।

তৃণমূলের এই আইন বিরোধিতার একতাই কারণ – মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে অটুট রাখা। তাই তিনি ইসলামবাদীদের তুষ্ট করতে ব্যগ্র যারা পশ্চিমবঙ্গকে আর একটি পাকিস্তান বানাতে চায়। তারা ক্রুদ্ধ হবে এমন সব পরিকল্পনাকে তিনি বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। এজন্য এমনকি মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা ১০২ বছর বয়স্কা বীণাপাণি দেবীর শেষ চিঠিকেও আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছেন। যাতে বীণাপাণি দেবই তার কাছে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন:

“আমি আপনাকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, আমরা এত বছর ধরে ভারতে থেকেও আজ পর্যন্ত নাগরিকত্ব পাই নি। আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে,আমাদের এই দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবেন। আমি অনুরোধ করছি, আপনার দলকে বলুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে সমর্থন করতে, নতুবা মতুয়া সম্প্রদায় আপনার দলকে সমর্থন করবে না।”

এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার যে, পশ্চিমবঙ্গ আজ কট্টরপন্থী ইসলামিক মৌলবাদীদের ল্যাবরেটরিতে পরিণত হয়েছে, যারা বাংলার জনবিন্যাসকে বদলে দিতে চায়। আর তাদের এই পরিকল্পনাকে প্রত্যক্ষ মদত দিয়ে চলেছে তৃণমূল ছাড়াও কংগ্রেস এবং সিপিএম। তিন দলের কেউই জেহাদী ভোটব্যাঙ্ককে চটাতে চায় না বলে এই আইনের বিরোধিতা করে চলেছে। এই মুহূর্তে বিজেপিই একমাত্র দল যারা বাঙালি হিন্দুদের এই সঙ্কটকে বুঝেছে এবং তাদের জন্য যে কোনও ধরণের রাজনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছে।

এই ইস্যুতে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির ঐতিহাসিক অবস্থান

বিলের বিষয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির নিরন্তর অবস্থান পরিবর্তন করা:

রাজনৈতিক বিশ্বাস যাই হোক, সীমান্তের ওপারের সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচারের বিষয়টি কারুরই অজানা নয়। অথচ দেশভাগের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিবেশী দেশগুলির  হিন্দু / শিখ সংখ্যালঘুদের এই আশ্বাস দিয়ে এসেছেন যে তাদের ভালো-মন্দ দেশভাগের একটি অসম্পূর্ণ বিষয়সূচি হিসাবে নেতৃত্বের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। তাদের জন্য অশ্রুমোচনে পিছিয়ে ছিল না বাম দলগুলির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা এবং সংসদ সদস্যরা। সংসদে প্রায়শই এইসব সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতা ও তাদের পুনর্বাসনের প্রশ্ন উত্থাপন করেছে বামপন্থী দলগুলি।

তবে এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আজ ভারত যখন তার সাংস্কৃতিক সন্তানদের জন্য নিজের দরজা খোলার এই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করছে, এই রাজনৈতিক দলগুলি নিছক ভোট-ব্যাংক রাজনীতির ভণ্ডামির জন্যদেশভাগের সময় থেকে ধারাবাহিক ভাবে এই নিপীড়িত সংখ্যালঘুদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির নির্লজ্জ খেলাপ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.