মুসলিম ভোটও হারাচ্ছেন, নইলে এমন আবেদন করবেন কেন? মমতাকে নিশানা শাহের

কলকাতাকে লন্ডন বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনা, বিদ্রূপের ঝড় বয়ে যায়। সোস্যাল মিডিয়ায়ও হাসিঠাট্টা-মস্করা, মিমের ঢল নেমেছিল। এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখেও কলকাতার নাম। নির্বাচনী আবহে শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে কল্লোলিনী, তিলোত্তমা, মিছিল নগরী তকমা পাওয়া কলকাতাকে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। আগামীকালই কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি জেলায় ভোটগ্রহণ। সেই প্রেক্ষাপটে তাঁর এহেন বক্তব্য। তিনি বলেছেন, কলকাতা হবে দেশের সাংস্কৃতিক রাজনীতি, শহরের সব গলিতে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

শুরুতেই রাজ্যবাসীকে বাংলা নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানান তিনি। বলেন, প্রথম তিন দফায় অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়েছি। ৬৩-৬৮ আসন পেতে চলেছে বিজেপি।

কলকাতার উন্নয়ন প্রসঙ্গে বিজেপির ভাবনাচিন্তা ব্যাখ্যা করে একটা সময় কলকাতা সিঙ্গাপুরের ডেভেলপমেন্ট মডেল ছিল বলে উল্লেখ করেন শাহ। বলেন, এই শহর সিটি অব জয়। কলকাতা হবে সিটি অব ফিউটার। কলকাতার পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। কলকাতাকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ সিটি করবেন বলে ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন, বাংলার সংস্কৃতির যা হাল দিদি করেছেন! নোবেল প্রাইজের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরস্কার এবং অস্কারের মতো সত্যজিৎ রায় পুরস্কার চালু হবে বলেও জানান তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের একজোট হয়ে তৃণমূলকে ভোট দিতে, মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন না ধরানোর ডাক দিয়েছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। নির্বাচন কমিশনও মুখ্যমন্ত্রীকে এর ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে। আজ শাহ বলেন, এতে স্পষ্ট উনি সংখ্যালঘু ভোটও হারাচ্ছেন। নইলে এই ধরনের আবেদন করবেন কেন! এসবের জায়গায় হারের কারণ বিশ্লেষণ করুন, কেন আপনার বিরুদ্ধে জোট বাঁধছে বাংলার জনতা? কারণ, আইনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখানে অনুপ্রবেশকারীদের অবাধ প্রবেশ চলছে। কলকাতার বাঙালিরাও উদ্বিগ্ন, শহরের পরিস্থিতি কী হবে! মহিলারা নিরাপদ নন। মহিলাঘটিত অপরাধে বাংলার অবনতি হয়েছে আরও। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়েছে। তৃণমূল কীসের ভিত্তিতে ভোট চাইছে, প্রশ্ন তোলেন তিনি। মোদী সরকারের জনকল্যাণ প্রকল্প সমাজের প্রান্তিক মানুষের কাছে মমতা পৌঁছতে দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বিজেপি কর্মীদের ওপর শাসক দলের হামলার অভিযোগও তোলেন শাহ। বলেন, আমাদের কর্মীদের উপরে লাগাতার হামলা হচ্ছে। কাল ভবানীপুর পুলিস থানায় ছিলেন কর্মীরা। তখনও হামলা হয়েছে। কিন্তু তার নিন্দা করে একটা কথাও বলেনি কেউ। মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। রাজনৈতিক কর্মীদের উপরে হামলা হলে সকলে মিলে নিন্দা করে। কিন্তু তৃণমূল তা করেনি। মমতার কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার নির্দেশ প্রসঙ্গেও শাহ বলেন, একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, একটা দলের সুপ্রিমোর মুখে এমন কথা আমার গোটা রাজনৈতিক জীবনে কখনও শুনিনি। এটাও হতে পারে প্রতিবারের মতো রিগিং করে জিততে চাইছেন। উনি অভিযোগ করছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে তাঁকে বিরক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা হল, নির্বাচনের সময় আধা সামরিক বাহিনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, নির্বাচন কমিশন তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তৃণমূলের আচরণে ওদের হতাশাই ফুটে উঠছে। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে এমন মন্তব্য দেখিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.