নন্দীগ্রাম আন্দোলন যখন চরমে, আন্দোলনকারীদের পাশে থাকতে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, খেজুরি থেকেই তিনি ফিরে আসেন। কারণ, রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর থেকে তিনি নাকি জীবনসংশয় হতে পারে বলে বার্তা পেয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, এতটাই সেই ভয় ছিল যে, একটা ঢিল পড়ার শব্দ শুনেই নাকি মমতার ভ্রম জন্মেছিল গুলি চলছে বলে। তাই, আন্দোলনকারীদের সামনে হেঁটে নন্দীগ্রামে আর মিছিল করা হয়ে ওঠেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সূত্রের খবর, অর্জুন সিংয়ের গড় বলে পরিচিত ভাটপাড়াকেও খেজুরির মতনই ভয় পাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই কারণেই বৃহস্পতিবার ভাটপাড়ায় মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে আসেন মমতা। বৃহস্পতিবার, ভাটপাড়া দিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর কনভয়ের চারপাশ থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেন অর্জুন অনুগামীরা। যা শুনে কনভয় থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
একই ঘটনা কয়েকদিন আগেই ঘটেছিল তৃণমূল সুপ্রিমো চন্দ্রকোণা যাওয়ার পথে। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি সমর্থকরা। গাড়ি থামিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেড়ে যেতে, সেই বিজেপি সমর্থকরা পালিয়ে যান। বৃহস্পতিবার কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নামলেও ভাটপাড়ায় কেউ পালিয়ে যাননি। প্রতিবাদকারী চাষি শিলাদিত্য বা কামদুনির প্রতিবাদকারীর মধ্যে তিনি যেমন ‘মাওবাদী’কে খুঁজে পেয়েছিলেন, তেমনই বৃহস্পতিবার ভাটপাড়ার অর্জুন অনুগামীদের মধ্যে মমতা খুঁজে পান ‘ডাকাত’কে। কিন্তু, ভাটপাড়ার অর্জুন অনুগামীরা মমতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। তাই, তাঁর গাড়ি দু’চাকা এগোতেই তৃণমূল সুপ্রিমোকে শুনতে হয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘নরেন্দ্র মোদি জিন্দাবাদ!’
তৃণমূল সূত্রে খবর, এসব দেখেই খুব ভয় পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরই ভাটপাড়ায় তাঁর নেতৃত্বে মিছিল করার সিদ্ধান্ত বদলান। শুধু তাই নয়, নৈহাটির সভায় গিয়ে সেই ভয়ের চোটেই নাকি তিনি বলেছেন, ‘মনে রাখবেন আমি কিন্তু খুব ভয়ঙ্কর।’ আবার বলেছেন, ‘মারলে এখানে, বিচার হবে অন্যখানে।’ কিন্তু, একবারও নিজের চেনা সংলাপ, ‘করতে পারলে কর। ধরতে পারলে ধর। না-পারলে কেটে পড়’ বলেননি। দিল্লিতে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে হাজির অর্জুন সিং কি সেই সময় মুখ না-খুলেও মমতার চেনা সংলাপটাই ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমোর দিকে? অর্জুনে আস্থাশীল অবাঙালির ভাটপাড়া অন্তত তাই মনে করে।