পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক’দিন আগে জানিয়ে দিয়েছে, এ রাজ্যে এনপিআর তথা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের কাজ হবে না। এ ব্যাপারে রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার কতটা রয়েছে তা নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর জানিয়ে দেওয়া হল, আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে এনপিআর-এর কাজ শুরু করবে সেনসাস কমিশন। কী তার উদ্দেশ্য? কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি সাধারণ নাগরিকের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে তা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তাঁদের সম্পর্কে তথ্য দেবেন। কোনও ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ৬ মাস ধরে থাকলে বা কোনও এলাকায় পরের ৬ মাস ধরে থাকার কথা জানালে তাঁকে সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে ধরা হবে।
গোটা এই প্রক্রিয়ার জন্য কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০১০ সালে এনপিআর-এর কাজ হয়েছিল। তার পর ২০১১ সালে জনগণনার হিসাব প্রকাশ করা হয়। দশ বছর পর ২০২১ সালে ফের জনগণনার হকিকত প্রকাশ করা হবে। তার আগে এনপিআর-এর কাজ শেষ করা অপরিহার্য।
প্রশ্ন উঠতে পারে এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আপত্তি কেন?
তার ব্যাখ্যা সরকারি তরফে স্পষ্ট ভাবে দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেছিলেন, বাংলায় এনপিআর-এর কোনও কাজ হবে না। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি ছাড়া এক পা-ও এগোনো যাবে না। একই ভাবে এনপিআর নিয়ে আপত্তি তুলেছে কেরলে বাম সরকারও।
তবে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদী সরকার গোটা দেশজুড়ে যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তথা এনআরসি বলবৎ করতে চলেছে, এনপিআর হল তার প্রাথমিক ধাপ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সরকার নির্ধারণ করতে চায় কে নাগরিক আর কে অনুপ্রবেশকারী। সেই কারণেই এই প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন দিদি।
যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য হল, এনপিআর-এর কাজ কোনও রাজ্য সরকার আটকাতে পারে না। সাংবিধানিক ভাবে কোনও রাজ্যের এক্তিয়ারে তা নেই। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এই কাজে সহযোগিতা করে মাত্র। রাজ্য সরকার সেই সহযোগিতা না করলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিদের দিয়ে বাংলায় এনপিআর-এর কাজ করানোর চেষ্টা হবে।
পর্যবেক্ষকদের আরও একটি আশঙ্কা রয়েছে। তা হল, বাংলায় জনগণনার কাজ না হলে আখেরে বাংলার মানুষ বঞ্চিত হতে পারে। কারণ, বহু প্রকল্পে কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করে রাজ্যের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে। বর্তমানে ২০১১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে সেই অর্থ বরাদ্দ করা হয়। দশ বছরে জনসংখ্যা যে বেড়েছে তা নিয়ে সংশয় নেই। বাংলার জনসংখ্যা আপডেট না হলে আর্থিক ভাবে রাজ্যের ক্ষতি। তাতে প্রকারান্তরে ক্ষতি হতে পারে রাজ্যের মানুষের।