নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলে শনিবার সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কোনও রাখঢাক না করে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, কাউকে তো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতেই হবে। আমি বেঁধে দিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে রবিবার পাল্টা জবাব দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের তরফে উপ নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার বলেন, কমিশন যা করেছে তা সংবিধান মেনেই করেছে। তাকে যে ভাবে ‘খামখেয়ালি’, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং কেন্দ্র শাসক দলের তরফদারি বলে মন্তব্য করা হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে ওই অভিযোগের উত্তর দেওয়া মর্যাদার বলে মনে করে না কমিশন।
কমিশনের সঙ্গে মমতার এই সংঘাতে সূত্রপাত ঘটে শুক্রবার রাতে। সে দিন কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার-সহ রাজ্যের চার পুলিশ কর্তাকে রাতারাতি বদলি করে দেয় কমিশন। তাতে চটে গিয়ে শনিবার কমিশনকে কড়া চিঠি লেখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন পক্ষপাত করছে। বিজেপির কথায় চলছে তারা। শুধু তা-ই নয়, পরে একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুকুলের নাম না করে মমতা বলেন, এক জন গদ্দার আছে। সে যেমন যেমন বলছে, কমিশন তেমন করছে।
এর পর কমিশনের তরফ থেকে কোনও জবাব না এলে বরং সেটা বিস্ময়ের হতো! রবিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর ওই অভিযোগের জবাব দেয় কমিশন। চিঠিতে তাঁরা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী কোনও রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানো শুধু কমিশনের দায়িত্ব নয়, তা রাজ্যেরও দায়িত্ব। সংবিধানের ৩২৪(৬) ধারা ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ভোট চলাকালীন কোনও অফিসারকে বদলি করার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে।
কমিশন এই চিঠি দেওয়ার আগেই এ দিন সকালে কোচবিহারে সভা করতে এসে মমতাকে খোঁচা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সভা মঞ্চ থেকে ভিড়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনারা যত মোদী মোদী করছেন, তত ভয় পাচ্ছেন দিদি। আর সব রাগ নির্বাচন কমিশনের উপর ঢেলে দিচ্ছেন।” পাশাপাশি মমতাও আবার পাল্টা বলেছেন, যতই বদলি হোক তাতে ভোট কমবে না। বরং বাড়বে।
এর পরেই বিকেলে কমিশনের চিঠি এসে পৌঁছেছে নবান্নে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলায় সাত দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তেই নিয়েছে কমিশন। এ ব্যাপারে বহু দিন ধরে আলোচনা চালিয়েছে কমিশন। বাংলায় কমিশনের ফুল বেঞ্চ নিয়ে বৈঠক করেছে। সেখানে কমিশনের সামনে বিরোধীরা প্রচুর অভিযোগ পেশ করেছে। তা ছাড়া বাংলার জন্য নিযুক্ত বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকও রিপোর্ট দিয়েছেন। তার পরেই চার পুলিশ কর্তাকে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, বাংলায় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে।
গত দু’টি পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সর্ব স্তরে সমালোচনা হয়েছে। সেই রিপোর্ট ও ভিডিও ফুটেজ ও ফটোও পেয়েছে কমিশন। সেই পরিস্থিতিতে সব রকম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলতে কমিশন বাধ্য। কমিশনের এক কর্তা এ-ও বলেন, যে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের পর গণনা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, এবং তার পরেও প্রশাসন চুপ করে থাকে,সেখানে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করানো বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কমিশন সুষ্ঠু ভোট করাতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখবে না।