বিজেপি-কে ভোট দেওয়ার ফল কী, তা বোঝাতে গিয়ে একুশের মঞ্চ থেকে ভাটপাড়াকে উদাহরণ হিসেবে টানলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “বিজেপি-কে ভোট দিলে কী হয় দেখছেন তো? ওই যে ভাটপাড়া দেখছেন না!” আর মমতার এই বক্তব্য নিয়েই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিজেপি, বাম, কংগ্রেস সব দলেরই প্রশ্ন, তাহলে কি এটা বলার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত দু’মাস ধরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের হিংসা, অরাজকতা জিইয়ে রেখেছেন?
বিরোধীদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো শুধু তৃণমূলনেত্রী নন। উনি তো বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। রাজ্যের প্রশাসনের প্রধান। গত দু’মাসে ১৭ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছে ভাটপাড়ায়। প্রকাশ্যে চলছে গুলি-বোমা। রাজনীতির আশেপাশে না থাকা মানুষ পোকামাকড়ের মতো মারা যাচ্ছে। মেয়েদের শ্লীলতাহানি হচ্ছে। বাড়িঘর, দোকানপাট লুঠ হচ্ছে। আগুন জ্বলছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ এখন ধর্মীয় সংঘর্ষের আকার নিয়েছে। এবং তাতে ভূমিকা নিচ্ছে বহিরাগতরা। যারা প্রায় সকলেই সমাজবিরোধী, পুলিশের খাতায় যাদের নামও রয়েছে। তাদের ধরতে পারছে না কেন পুলিশ? এর দায় কার?
সেই যে ১৯ মে ভাটপাড়ার বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন হিংসার শুরু, তা এখনও থামেনি। এর মধ্যে কত কিছু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়েছেন, রাজ্য পুলিশের ডিজি গিয়েছেন, নতুন থানা তৈরি হয়েছে, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বদলেছে নবান্ন, তাও শান্ত হয়নি ভাটপাড়া।
রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, “রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা দেখা। তা না করে উনি বিজেপি-র ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আমরা বলছি, ভাটপাড়ার এই অবস্থার জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এমন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলে যে কোনও জায়গাই কাশ্মীর হয়ে যাবে।”
ভোটের ফল প্রকাশের পর মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল নৈহাটিতে। ধর্নায় যোগ দিয়েছিলেন মমতা। অভিযোগ ছিল, বিজেপি সন্ত্রাস চালিয়ে তৃণমূলকর্মীদের ঘরছাড়া করেছে। তখনই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলেছিলেন, তৃণমূলের শাসনে যদি তৃণমূলকর্মীরা ঘরছাড়া হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলার ছবিটা স্পষ্ট।
রাজনৈতিক মহলের মতে, নন্দীগ্রাম-লালগড়ের সময়ে তৎকালীন বাম নেতারাও অভিযোগ তুলতেন বিরোধী তৃণমূলের দিকে। মিটিং-এ মিছিলে বলতেন, “মাও-তৃণমূল এক হয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের কর্মীরা ঘরছাড়া।” তাতে তো সহানুভূতি বাড়েনি, বরং জনমানসে এমন ধারনা তৈরি হয়েছিল, বিরোধী মমতার দাপটে টলমল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার। এক্ষেত্রেও তেমনই গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের প্রশ্ন, ভাটপাড়াকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে প্রশাসক মমতা ব্যুমেরাং করে ফেললেন না তো?