পশ্চিমবঙ্গে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করছেন মমতা

ভারতে ২০১৯-এর লােকসভা ভােটের বাদ্যে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রচারের নামে প্রলয় নৃত্য আরম্ভ করেছেন। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযােগ্য। তিনি যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে কোমরে রশি দিয়ে ঘােরাবেন, দাঙ্গা বাঁধানাের জন্য ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসাব নেবেন, থাপ্পড় মারবেন, কান ধরে ওঠবােস করাবেন বলে গালি দিচ্ছেন তা সমস্ত রকম শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে কয়েকটা প্রশ্ন করি, (১) গত ১৩-৩-২০১৩ তারিখের একটি দৈনিক পত্রিকায় আইপিএস অফিসার নজরক্স ইসলামের একটি বিস্ফোরক চিঠির কপি ছাপা হয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীকে অসৎ, মিথ্যাবাদী, ঘুষখাের এবং তাঁর ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি জাল বলে উল্লেখ করেছেন। এতদসত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজরুলের বিরদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবার সাহস দেখাননি। কারণ মুসলমান ভােট হারানাের ভয়।নজরুলের অভিযােগগুলি মিথ্যা প্রমাণ করার মতাে কোনও তথ্য মমতার ছিল না।
(২) টিএমসি-র প্রাক্তন এমএলএ তথা প্রাক্তন আইএএস দীপক ঘােষ তাকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটা বই লিখেছেন। যেমন ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেমন দেখেছি’, ‘এ কেমন মমতা। ওই বইগুলােতে যেসব অভিযােগ করেছেন তা খণ্ডন করতে আপনি কি দীপক ঘােষের সম্মুখে হাজির হয়ে তার জবাব দিতে রাজি আছেন?
আপনার কয়েকটি অভিযােগের উত্তর আমি দিচ্ছি—
(১) প্রথম অভিযােগ গান্ধী হত্যার জন্য আপনি আরএসএস এবং বিজেপিকে দায়ী কেরেছেন। এই প্রবন্ধকার গান্ধীহত্যার পুরাে জাজমেন্ট পড়ে ছে তাতে কোথাও আরএসএসকে দায়ী করা হয়নি, সুতরাং আপনার অভিযােগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
(২) দ্বিতীয় অভিযােগ, নরেন্দ্র মােদী এবং বিজেপি দাঙ্গাবাজদের দল। গান্ধী হত্যার পর মহারাষ্ট্র ব্যাপী ব্রাহ্মণদের উপর যে অত্যাচার হত্যা ও গৃহদাহ করেছিল তারা কারা ? ব্রাহ্মণদের উপর এই অত্যাচারের কারণ ছিল নাথুরাম একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন। ১৯৮৪-এ বিহার দাঙ্গা, ইন্দিরা হত্যার পর দিল্লির হাজার হাজার শিখ হত্যা, ভাগলপুর, মিরাট, মুরাদাবাদ আহমেদ নগর, মুম্বই, নেলি, কোকড়াঝাড় দাঙ্গার সময় কেন্দ্রে এবং রাজ্যে কংগ্রেস সরকার ছিল। আপনি তাে তখন কংগ্রেসি।
(৩) আপনি বলেছেন নরেন্দ্র মােদী এবং বিজেপি দেশকে টুকরাে টুকরাে করতে চায়। দেশভাগের জন্য দায়ী মুসলিম লিগ, কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা। দেশভাগের প্রাক্কালে। মুসলিম লিগের অত্যাচারে ২০ লক্ষ নিরীহ হিন্দু ও শিখ খুন হয়েছে। লক্ষ লক্ষ পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অসংখ্য নারী মুসলিম লিগ গুন্ডাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। তাদের ঔরসজাত সন্তানদের দিল্লির কারােলবাগ কাপুর হাসপাতালে হত্যা করা হয়েছে। অথচ সেই মুসলিম লিগ আপনার সহযােগী। বহরমপুর সভায় আপনিই বলেছেন মুসলিম লিগও আমার সঙ্গে আছে।
(৪) আপনি বলেছেন– জরুরি অবস্থা চলছে। অপনার গুরুমা ইন্দিরা জরুরি অবস্থা জারি করে ১ লক্ষ ২৫ হাজার বিরােধী দলের নেতাকে জেলে পুরে দিয়েছিলেন। ভারতের জেলগুলিতে যে সংখ্যক কয়েদি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তার পাঁচগুণ কয়েদি গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হয়। তার উপর অতিরিক্ত ১ লক্ষ ২৫ হাজার বিরােধী নেতা-কর্মী, অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতাে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাকে জেলে পুরে কয়েকদিনের জন্য বরাদ্দ সাদা-নীল ডােরা পাজামা-ফতুয়া। পরতে বাধ্য করা হয়েছে। জর্জ ফার্নানডেজকে পায়ে শিকল বেঁধে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে জেলে পােরা হয়েছে। রাজমাতা বিজয়রাজে সিন্ধিয়া এবং গায়ত্রীদেবীকে (কোচবিহারের রাজকন্যা) মাটিতে শুতে এবং জেলের লপসি খেতে বাধ্য করা হয়েছে। বরুণ সেনগুপ্ত, গৌরকিশাের | ঘােষের মতাে সাংবাদিকদের জেলে পুরে রাখা হয়েছে। কলকাতার সমস্ত সংবাদপত্র রাইটার্স বিল্ডিংয়ে এনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সইয়ের পর ছাপানাে হতাে। সেই ব্যক্তি আপনার দাদা তিনি এখনাে আপনার মন্ত্রীসভা আলােকিত করে বসে আছেন। ইন্দিরা জরুরি অবস্থার সমর্থনে স্বাক্ষর করতে বাঙ্গলার বিশিষ্টজনদের বাধ্য করা হয়েছে। স্বাক্ষরদাতাদের প্রথম নাম বিশিষ্ট ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের। সেই হ্যান্ডবিল আমার সংগ্রহে আছে।…আচ্ছা, জয়প্রকাশ নারায়ণ যখন ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে সভা করতে এসেছিলেন তখন জনৈকা যুব কংগ্রেস নেত্রী তার গাড়ির বনেটের উপর উঠে নৃত্য করেছিলেন। তাকে কি মমতা দেবী চেনেন?
আপনি যেভাবে প্রচার সভার শেষে চৌকিদার চোর হ্যায় বলে জনসাধারণকে উত্তেজিত করছেন তার ফল কী হবে জানেন? চৌকিদার নরেন্দ্র মােদীকে হাতে কাছে না পেয়ে তার সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করছেন। তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। এই ভাবে পশ্চিমবঙ্গে একটা গৃহযুদ্ধের পরিবেশ আপনি সৃষ্টি করছেন।
আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার দিবাস্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু আপনার জন্মপঞ্জিকায় লেখা আছে আপনার সে আশা পূর্ণ হবে না। আপনার অন্যসব মিয়াভাই-দোসররা চু পচাপ থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। যেমন ফিরহাদ মিয়া আপনার সমর্থনে চাটিম চাটিম বুলি ভঁজছেন, তিনি আশায় আছেন আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার খুলে দিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ঢুকিয়ে এটাকে গ্রেটার বাংলাদেশ করার পথকে ত্বরান্বিত করবেন। তখন আপনার কী হবে?
রবীন্দ্রনাথ দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.