একটা জিনিস লক্ষ করেছেন? দিদি আজ মন্ত্র পড়েননি!
লোকসভা ভোট হয়েছে মাত্র দু’মাসও হয়নি। দেখা গিয়েছিল, প্রতিটি জনসভার শেষেই অন্তত পাঁচ মিনিট মন্ত্র পড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওঁ জবাকুসুমশঙ্কাসং থেকে জয় সন্তোষী মা! যার মোদ্দা বার্তা ছিল, বিজেপি কত বড় হিন্দু, তৃণমূল তার থেকেও বড়!
কিন্তু একুশের মঞ্চে তা একেবারে উবে গেল! হিন্দু মন্ত্রও না, বার বার ইনসাল্লাহ-গড ইজ গ্রেটও না। বরং ধর্মতলার মঞ্চ থেকে দিদি রবিবাসরীয় দুপুরে বললেন, শিল্পের কথা। কর্মদিগন্তের কথা। আশি হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা। পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থানের কথা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ব্যাপারটা সোজা সাপ্টা। দিদি, অর্থাৎ তৃণমূল বুঝতে পেরেছে মেরুকরণের রাজনীতিতে হাত পুড়ছে তৃণমূলের। লোকসভা ভোটের ফলাফলই তার হাতে গরম প্রমাণ। বাংলায় ২ থেকে বেড়ে বিজেপি-র ১৮টি আসন জেতার নেপথ্যেও রয়েছে সংখ্যাগুরু ভোটের মেরুকরণ। যেন হিন্দুদের দল হল বিজেপি, তৃণমূল হল সংখ্যালঘুদের পার্টি।
হয়তো ভুল ব্যাখ্যা করছেন না পর্যবেক্ষকরা। বিধানসভা ভোটের আগে এখন রাজনৈতিক কৌশলী ভাড়া করেছে তৃণমূল- প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূলের সূত্রের খবর, কদিন আগে দিদির সঙ্গে বৈঠকে প্রশান্ত কিশোরই পরামর্শ দিয়েছেন, বিজেপি জয় শ্রীরাম স্লোগান তুললেও সেই ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় করে তুলতে হবে উন্নয়নকে। গ্রাম বাংলায় তৃণমূল যে উন্নয়ন করেছে, তাকে। জানাতে হবে আগামী দিনে বাংলায় তৃণমূল কী ধরনের উন্নয়ন করে দেখাতে চাইছে। এবং সেই সঙ্গে সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারি প্রকল্পের টাকা ঠিক মতো যাতে উপভোক্তাদের হাতে পৌঁছয়। সেখান থেকে কেউ কাটমানি না নেয়।
দেখা গিয়েছে তার পর থেকেই রাজনৈতিক আলোচনায় ধর্মীয় বিষয়ের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতেও আব্বুলিস দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে তৃণমূল কতটা সহানুভূতিশীল তা আলাদা করে বোঝানোর চেষ্টাও নেই। বরং বানতলায় কর্মদিগন্ত উদ্বোধন ঘটা করে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ঠিক করেছেন, চার দিন পর থেকে জেলাওয়াড়ি প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করবেন। ভোটের জন্য সরকারি প্রকল্পের কাজে যে ধাক্কা লেগেছে, সেই জট খোলার চেষ্টা করবেন। জেলা ও ব্লক স্তরের আমলাদের বার্তা দেবেন, ‘ডু ইট নাউ।’
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেছেন। হিজাব পরে, ইমাম ভাতা চালু করে মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন তিনিই। সেই উর্বর মাটিতেই বিজেপি হিন্দুত্বের বীজ ফেলেছে। সুতরাং এ জন্য তিনিই দায়ী। বাস্তব হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। ধর্ম নিয়ে তাঁর অবস্থানেও মানুষের ভরসা নেই। আর যে ভাবে উনি বলতেন লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন,- সেই ভাঁওতাও ধরা পড়ে গিয়েছে।