খড়্গপুর সার্কিট হাউস থেকে চন্দ্রকোণায় পদ যাত্রায় যাবেন দিদি।
ফণী-র দশা ততক্ষণে কেটে গিয়েছে। স্টেট হাইওয়ে বেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্করপিও চলছে হু হু করে। পিছনে বাকি গাড়ির কনভয়।
মাঝে মাঝে লোক দেখলে গাড়ির গতি কমিয়ে দিচ্ছিলেন চালক।
এমন ভাবেই যেতে যেতে যেতে… ফের কিছু লোকের জটলা। রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেলে, ছোকরারা, গেরস্তের বউ .. যেমনটা হয়।
দিদির কনভয় আসছে, সেটা জানত কি না কে জানে! কিছু ছেলে সমস্বরে ঘনঘন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলতে শুরু করে দিল। এমন ভাবে যাতে দিদির কানে পৌঁছয়।
আর যায় কোথায়! গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লেন মমতা। পিছনের দরজা খুলে তাঁর দেহরক্ষীও নেমে পড়েছেন ততক্ষণে। কিন্তু দিদি নিরাপত্তার ধার ধারেন না কখনওই। গাড়ি থেকে নেমেই এগিয়ে গেলেন! ওদিকে মমতাকে নামতে দেখেই স্লোগান তোলা ছেড়ে দে ছুট! কটমট করে ওদের দিকে তাকিয়ে দিদি বলতে দেখা গেল, -‘কী রে পালাচ্ছিস কেন? সব হরিদাস কোথাকার!’
মমতা এমনই। বরাবরই ডাকাবুকো। মুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁর ভিতরে বিরোধী নেত্রীর সত্ত্বা সদা জাগ্রত। সন্ধেবেলা এই ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। তার মধ্যে একজন ঘাটাল দক্ষিণের বিজেপি-র যুব মোর্চার সভাপতি সীতারাম মিদ্দা।
কিন্তু পর্যবেক্ষকরা অনেকেই অন্য কিছু যেন দেখতে পাচ্ছেন! তাঁদের কথায়, এই যে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় দেখে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলছে, এও তো রাজনৈতিক ইঙ্গিতবাহী। ২০১১ সালে মমতা ক্ষমতায় আসার পর এমন সাহস কেউ দেখিয়েছে! দেখানোর প্রশ্ন গোড়াতে ছিল না। পরিবর্তনের পর ২০১৪ সালের ভোট পর্যন্ত বাংলায় তৃণমূল সরকারের মধুচন্দ্রিমা চলেছে। বিরোধ তেমনই। কিন্তু এখন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় দেখে স্লোগান তুলতেও ভয় পাচ্ছে না। দিদি গাড়ি থেকে নেমে পড়ার পর পুলিশ, নিরাপত্তা রক্ষী দেখে কেউই মুখোমুখি তর্ক করবে না তা স্বাভাবিক। কিন্তু তার আগে যা হয়েছে তা চিন্তার কারণ বটে।
তাঁদের কথায়, দিদির গাড়ি দেখে স্থানীয় ছেলে ছোকরারা জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলছে মানে সেখানে বিজেপি-র সংগঠন পোক্ত। নইলে দিদি গাড়ি না থামলেও, তাঁর ভাইয়েরা তো রয়েছেন। তাঁদের ভয়েই এমন স্লোগান তোলার সাহস দেখায় না কেউ। যার মানে ওখানে বিজেপি-র পোক্ত সংগঠন রয়েছে তা নয়, হতে পারে তৃণমূলের সঙ্গে সেখানে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করছে গেরুয়া শিবির।