বরাক উপত্যকায় নারী সমাজ কথিত কথা — দেব-দানবের যুদ্ধে দানবদের পরাজিত করে উষাকে প্রথম দেখলেন কার্তিকেয়। রূপমুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই প্রেম। কার্তিকেয় উষাকে বিবাহ করতে চাইলেন। উষা রাজিও হলেন, অমন রূপবান পুরুষের বাহুপাশ কল্পনা করে। কার্তিকেয় উষাকে সঙ্গে করেই আসছেন, ঘরে ঢুকবেন এবার। হঠাৎ খেয়াল হল মায়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
অনুমতি নিয়ে নিয়ম রক্ষা করে পত্নীকে ঘরে তুলতে চান তিনি। কাজেই এক শস্যক্ষেত্রে উষাকে অপেক্ষা করতে বলে তিনি দ্রুত মায়ের কাছে গেলেন, জানালেন মনোবাসনা। আর অনুমতির অপেক্ষা না করেই বরবেশে সজ্জিত হতে দ্রুত কক্ষত্যাগ করলেন।
সাজ সম্পূর্ণ হল; আশ্চর্য রূপবান এক দেবতা — সুকান্তি ঝরে পড়ছে, সেজেছেন বরের বেশে। এবার প্রণামের পালা! কিন্তু মাকে কিছুতেই খুঁজে পান না তিনি। অবশেষে পেলেন রান্নাঘরের কোণে, গোগ্রাসে মহিষ ভক্ষণরত অবস্থায়। মায়ের অদ্ভুত আচরণে কার্তিক বিস্মিত ও আতঙ্কিত হলেন। দেবীদুর্গা বললেন, বৌমা ঘরে এসে খেতে দেবে কিনা তার নিশ্চয়তা না পেয়ে তিনি ভোজনের সাধ মিটিয়ে অন্তিম আহার সাঙ্গ করছেন। মায়ের মনোভাব বুঝে কার্তিক স্তম্ভিত ও ক্রুদ্ধ হলেন। শপথ নিলেন, চিরকুমার থাকার।
অন্যদিকে কার্তিকের জন্য অপেক্ষায় প্রহর গুণতে গুণতে উষা যখন প্রকৃত বাস্তবটি জানলেন, তখন লজ্জায়, অপমানে হতাশায় সেই শস্যক্ষেত্রেই চিরজীবনের জন্য অদৃশ্য হলেন তিনি।
কাহিনীর জাগতিক তাৎপর্য
কাহিনীটির মধ্যের রহস্যটি বোধহয় — উষার শস্যক্ষেত্রে চির-অদৃশ্য হওয়া। আমরা জানি, উষা সূর্যের স্ত্রী ও শক্তি, বেদ-পুরাণে নিত্যবন্দিতা আর কার্তিক হচ্ছেন সূর্যসম্ভব দেবতা। উষা অর্থাৎ সৌরশক্তি শস্যক্ষেত্রের উদ্ভিদদেহে ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ সবুজ কলায় শোষিত হয়ে যা সম্ভব, তা হল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উৎপাদন বা Photosynthesis। এটাই কিংবদন্তীর জাগতিক তাৎপর্য। এভাবেই সৌরদেবতা কার্তিক যুক্ত হয়েছেন উর্বরতাবাদের সঙ্গে। কার্তিক যে উর্বরতাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তার আরও প্রমাণ হচ্ছে, কার্তিক পূজায় ‘অ্যাডোনিস গার্ডেন’-এর অনুরূপে চারাগাছপূর্ণ সরার ব্যবহার। লোকাচারের অঙ্গীভূত এই নকল শস্যক্ষেত্রই হচ্ছে অ্যাডোনিস গার্ডেন। শস্য কামনায় আচরিত প্রাচীন উর্বরতাকেন্দ্রিক জাদু প্রক্রিয়া কার্তিক পুজোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।