দলবদলের মরশুমে সামনের মাস থেকে বিজেপি-তে নাম লেখাতে লাইন পড়ে যাবে বলে জানিয়ে দিলেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারা।
ভোটের প্রচারে এসে চণ্ডীতলার জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে ৪০ জন বাংলার বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই কথা নিয়ে কমিশনে পর্যন্ত গিয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ করেছিল, ভোটের সময় ‘হর্স ট্রেডিং’ করছেন মোদী। কিন্তু মঙ্গলবারের বার বেলায় পরিষ্কার হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী কথাটা শুধুই কথা ছিল না। বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মুকুল রায়ের পুত্র-সহ তিন বিধায়ক এ দিন গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। সঙ্গে তিন পুরসভার ৫০-এর বেশি কাউন্সিলর। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ানোর পাশাপাশি মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সাত দফায় ভোট হয়েছে। সাত দফায় দল বদল হবে। সামনের মাস থেকে লাইন লেগে যাবে নয়াদিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি হেড কোয়ার্টারে।
এ দিন হালিশহর, কাঁচড়াপাড়া এবং নৈহাটির কাউন্সিলররা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় দফতরে গিয়ে দল বদল করেন। অন্য দিকে ভাটপাড়ার ১২ জন কাউন্সিলর অর্জুন সিং-এর অফিসে পদ্মফুলের ঝাণ্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। বিজেপি-র দাবি, এই সবকটি পুরসভাই কয়েকদিনের মধ্যে বিজেপি-র দখলে চলে যাবে। এ দিন খানাকুল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও ভাতাড়ের তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্যও যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে।
মুকুল রায় এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “পরের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিরোধী দলের মর্যাদা থাকবে না।” তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা এ দিন বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন তাঁরাই তো কয়েকদিন আগে ভোটের সময়ে তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। মুকুলবাবু বলেন, “ওটাই গোপন কৌশল। সবটা এক্সপোজ করতে নেই। ছিল তৃণমূলে। ভোট করিয়েছে বিজেপি-র হয়ে।”
কিন্তু এ ভাবে দল ভাঙানো কি হর্স ট্রেডিং নয়? একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায় বলেন, “বাংলায় হর্স ট্রেডিং করেছেন মমতা। ওঁর ওখানে কতজন কংগ্রেসের বিধায়ক আছে দেখুন।” গত শুক্রবার ভোটের পর প্রথম সাংগঠনিক বৈঠক করেছিলেন দিদি। সেই বৈঠকে সংগঠনে ঝাঁকুনি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক জেলা সভাপতি বদল করেছিলেন। তার মধ্যেই ছিলেন শঙ্কর সিং। রাণাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু খাতায় কলমে শঙ্কর এখনও কংগ্রেস বিধায়ক। অনেকেই বলেছিলেন, কংগ্রেসের বিধায়ক, তৃণমূলের জেলা সভাপতি। এ শুধু দিদির দলেই সম্ভব!
যদিও তৃণমূল প্রকাশ্য এ ব্যাপারে আমল দিচ্ছে না। দলের শীর্ষ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “একটা দল কিছু সিট জিতে ভাবছে গোটা বাংলার দখল নেবে। ব্যাপারটা অত সোজা নয়।” যদিও রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতেই। বিজেপি যা শুরু করেছে তাতে তৃণমূলের কাঁপুনি ধরে গিয়েছে। পুরসভা দিয়ে শুরু করে যদি এ বার আস্তে আস্তে পঞ্চায়েতের দিকে এগোয়, তাহলে তৃণমূল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যেতে পারে। তার উপর লোকসভার ১৫টি গ্রামীণ আসন এ বার বিজেপি-র দখলে গিয়েছে। এখন দেখার দফায় দফায় কতজন করে বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধি যোগ দেয় বিজেপি-তে। কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সংখ্যাটা। কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তৃণমূল।