চিরসুন্দর বিলাসিতায় ময়ূরপঙ্খী নাও
ময়ূরাক্ষী বাণিজ্যেতে শোভাযাত্রা যাও;
কন্দর্প ছটায় ভাসে
বিশ্বচরাচর,
শিবের কোলে গৌরীস্নেহে,
বালক-ঈশ্বর!
নদীবক্ষে ভাসিয়ে তরী ফসল ধানের খই
ময়ূরপঙ্খী গীত গেয়েছে মিশ্রসুরের ছই
নবানেরই দেব গো তুমি নবীন ধান্যে গোলা
তাই তো তোমার মর্ত্যপূজা সরায় যব ও ছোলা।
ফসল ফলাও শত্রু তাড়াও তাড়াও বন্যপ্রাণী
ঘটের পাশে শীষাল্পনা আচার পালেন রাণী;
অমন রূপে খোকার বুকে পেশী বোনার আসর
বন্ধ্যা মায়ে আসুক কোলে প্রজননের বাসর।

এই কবিতার বিষয়বস্তু হল: কার্তিককে শস্য, বাণিজ্য ও প্রজননের দেবতা হিসাবে গ্রাম বাংলায় মান্যতা দেওয়ার লোকাচার। কার্তিক সংক্রান্তিতে পুজো এবং তারও আগে থেকে শুরু হয় কার্তিক-ব্রত। কোথাও বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় কার্তিক-ঘটের চারপাশে ধানশীষের আলপনা দেওয়া হয়, সারা রাত গাওয়া হয় ফসল রক্ষার গান। কার্তিক ফসলের দেবতা না হলে কি তা গাওয়া হত?

নদীয়ার শান্তিপুরে পরিবেশিত হয় ময়ূরপঙ্খী গীত; এ এক ক্রম ক্ষীয়মাণ লোকসংগীত; মিশ্র সুরে গাওয়া এই আঙ্গিকে মানুষের সমস্যা ও অনুভূতি ধরা থাকে।

ময়ূরপঙ্খী নৌকায় কৃষি ফসল নিয়ে দূরপাল্লায় ভেসে যায় মাঝি, ময়ূরপঙ্খী গীত তার বহমানতাকে এক অপরূপ সুরের মূর্ছনায় আরও কোন সুদূরে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। একসময় পূর্ব ভারতে ময়ূরপঙ্খী উৎসব হত। সে সব রাজ্য ছিল কৃষিতে উন্নত। সকল মানুষের খাবার জুটে যাবার পর, উদ্বৃত্ত ফসল বাণিজ্যে যেত। বণিক সম্প্রদায়ের পালিত উৎসব ‘ময়ূরপঙ্খী’। নৌ যাত্রার প্রাক্কালে তারা কার্তিক পুজো করত।

কার্তিক প্রজননের দেবতা, পোয়াতি মা, বন্ধ্যা নারী কার্তিক ব্রত করেন পুত্র সন্তান লাভের জন্য। বারবণিতারা কার্তিক পূজা করেন অবদমিত পুত্র সন্তান লাভের জন্য, আর সুপুরুষ খদ্দেরের প্রার্থনায়। কার্তিক হলেন সেই চিরসুন্দর ‘বিলাসিতার কলাপ বিস্তারী’ দেবতা।

বলা হয়, তিনি চোরেদেরও দেবতা। চুরির সিঁদকাঠি নাকি তিনি আবিষ্কার করেছেন! আমি বুঝি, সৌন্দর্য কৌমার্য মানুষের মনকে নিত্য চুরি করে। মানুষের মনোভূম সৌন্দর্যে সৌকর্যে এমন সুন্দর মনচোরা হতে চায়! তাই কার্তিক পূজার বারোয়ারী কাটোয়া, বাঁশবেড়িয়া, মালদহে।

সন্দীপন নন্দন ঘোষ

চিত্রঋণ: শুভ্রজ্যোতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.