স্থানীয়দের দাবি, বিঘা তিনেক ওই জমির মালিক ছিলেন নির্মলা দাস নামে এক নিঃসন্তান বিধবা। শেষ জীবনে মন্দির ও হাসপাতাল বা স্কুল তৈরির জন্য জমিটি পঞ্চায়েতকে দান করেন তিনি।

মনসার থানে হওয়ার কথা ছিল মন্দির। নইলে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানেই যখন বছরদুয়েক আগে নির্মাণকাজ শুরু হয় তখন আশায় বুক বাঁধেন স্থানীয়রা। সরকারি দফতর ঘিরে জমজমাট হবে এলাকা, বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ছন্দ কাটে দিন কয়েক আগে। স্থানীয়রা দেখেন, নবনির্মিত সরকারি দফতরে ঝুলেছে বোর্ড। তাতে লেখা, ‘কর্মতীর্থ, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর।’ এর পরই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন স্থানীয়রা। সোমবার যা গড়াল জনতা পুলিশ সংঘর্ষে। ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা লাগোয়া বেড়গুম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রাম।

গোবরডাঙা কালীবাড়ি থেকে নকপুল পর্যন্ত ওই রাস্তা মূলত গোবরডাঙা শহরের সঙ্গে যশোর রোডের সংযোগকারী সড়কের অংশ। সেখানেই সোমবার সকাল থেকে বাঁধে ধুন্ধুমার কাণ্ড। মনসার থানের জমি কী করে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের হাতে গেল তা নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয়রা। নবনির্মিত কর্মতীর্থ ভবনে শুরু হয় ভাঙচুর। ইট মেরে জানলার কাচ ভাঙেন বিক্ষোভকারীরা। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গোবরডাঙা থানার পুলিশ।

ভাঙচুরের পর কর্মতীর্থের প্রবেশপথ
ভাঙচুরের পর কর্মতীর্থের প্রবেশপথ

পুলিশ পৌঁছতেই শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। অভিযোগ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট মারতে থাকে জনতা। পালটা কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। ছোড়ে স্টান্ট গ্রেনেড। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে পৌঁছয় হাবরা ও গাইঘাটা থানার অতিরিক্ত বাহিনী। পৌঁছয় RAF.

স্থানীয়দের দাবি, বিঘা তিনেক ওই জমির মালিক ছিলেন নির্মলা দাস নামে এক নিঃসন্তান বিধবা। শেষ জীবনে মন্দির ও হাসপাতাল বা স্কুল তৈরির জন্য জমিটি পঞ্চায়েতকে দান করেন তিনি। সে ছিল বাম জমানা। এর পর এলাকার দখল নেয় তৃণমূল। বছর দুয়েক আগে সেখানে শুরু হয় বিশাল ভবন তৈরির কাজ। সম্প্রতি সেই ভবনের গায়ে ঝোলানো হয় সরকারি ভবনের বোর্ড। তাতে লেখা, কর্মতীর্থ, সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর

স্থানীয়দের দাবি, ওই জায়গা থেকে ১০০ মিটার দূরে রয়েছে ভারত সেবাশ্রম সংঘের দফতর। কাছেই স্বামীজি সেবা সংঘের কার্যালয়। এলাকায় রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন প্রসন্নময়ী কালী মন্দির। এই জায়গায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দফতর কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।

বেড়গুম ১ নম্বর ব্লকের প্রাক্তন প্রধান অসীম ঘোষ ঘটনার পর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মন্দির ও কর্মসংস্থার তৈরির আশায় ওই জমি দান করেছিলেন আমাদের সবার নির্মলা পিসি। কিন্তু এক কী হল? সবার মত চাইছি।’

সোমবার সন্ধ্যাতেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিভিন্ন জায়গায় ধিকিধিকি জ্বলছে আগুন। তখনও ক্ষোভে গজরাচ্ছেন স্থানীয়রা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ নিরপরাধদের গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.