রাষ্ট্রসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বীকৃত সিদ্ধান্তকেই এবার হাতিয়ার করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের নজরদারিতে গণভোটের দাবি করেছেন মমতা। শুধুমাত্র সংসদে গরিষ্ঠতা রয়েছে বলে বিজেপি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে পেরেছে, আসলে দেশের অধিকাংশ মানুষ এই আইনকে সমর্থন করছেন না— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বার্তাই খুব জোরের সঙ্গে দিতে চেয়েছেন এ দিন। গণভোট হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, ক’জন এই আইনের পক্ষে এবং ক’জন বিপক্ষে— মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর।
তবে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে যে তিনি গণভোট চান না, তা-ও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর বার্তা— নিরপেক্ষ গণভোটের জন্য তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জকে চান।
আজ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে একের পর এক হিংসার ছবি ফুটে উঠেছে। একদিকে আজ বাম সংগঠন ও মুসলিম সংগঠন মিলে গোটা ভারত বন্ধ ডেকেছিলে। ভারত বন্ধের আংশিক প্রভাব বিহার আর ব্যাঙ্গুলুরে তে দেখা গেছে। ভারত বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমেছিলেন সিপিএমএর মহা সচিব সীতারাম ইয়েচুরি, যদিও ওনাকে দিল্লীর মণ্ডি বাজার থেকে গ্রেফতার করে নেয় পুলিশ। এছাড়াও আজ উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউতে আজ চরম হিংসার ছবি দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা লখনউতে ৩৭ টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এরপর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেন যে, যারা হিংসায় সম্পত্তি নষ্ট করেছে, এবার তাঁদের চিহ্নিত করে তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ তুলবে সরকার।
আরেকদিকে, নাগরিকতা সংশোধন আইন (CAA) আর নাগরিকপঞ্জী (NRC) নিয়ে বরাবর কেন্দ্রের মোদী সরকারকে (Modi Sarkar) আক্রমণ করে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী (Mamata Banerjee) আজ এই নিয়ে একটি বড় বয়ান দেন। কলকাতায় আজ নাগরিক সংশোধন আইন আর নাগরিকপঞ্জীর বিরোধিতায় গণভোটের দাবি করেন তিনি। তবে তিনি এটাও বুঝিয়ে দেন যে, এই গণভোট ভারত সরকারের তত্বাবধনে চাননা তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নিরপেক্ষ গণভোট করানোর জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের হস্তক্ষেপের দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার মমতা ব্যানার্জী কলকাতায় নাগরিকতা আইন নিয়ে ফের একহাতে নেন মোদী সরকারকে। উনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৩ বছর পর আচমকা আমাদের নাগরিক হওয়ার প্রমাণ দিতে হচ্ছে। বিজেপির গঠন হয় ১৯৮০ সালে, আর আজ বিজেপি ১৯৭০ সালের নথী চাইছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সবার কাছে নাগরিকতা আইন নিয়ে জোরদার বিরোধিতার আবেদনও করেন। উনি বলেন, এই আইনের বিরোধিতায় সবাই নামলে সরকার এই আইন তুলতে বাধ্য হবে।
মমতা ব্যানার্জী বলেন, ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি নামে একটি দল গঠন হয়, আর আজ সেই দলই ১৯৭০ সালের কাগজপত্র চাইছে। উনি বিজেপির উপর গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, বিজেপির কর্মীরা টুপি কিনে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে বদনাম করার জন্য সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে। উনি বলেন, বিজেপি নাগরিকতা সংশোধন আইনের মাধ্যমে হিন্দু আর মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।
প্রত্যাশিত ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রবল আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর কথায়: ‘‘সংসদে আইন পাশ হয়েছে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন সেই আইন মানেন না। শুধু নিজে নন, নিজের দলের সাংসদদের দিয়েও শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন যে, সিএএ মানবেন না। এটা সংবিধানের সাংঘাতিক উল্লঙ্ঘন। কিন্তু তাতেই তিনি থামছেন না। রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ চাইছেন। অর্থাৎ, দেশের সুপ্রিম কোর্টের উপরেও মমতার আস্থা নেই।’’ দিলীপের কথায়, ‘‘মমতা আইন মানেন না। মমতা সংসদ মানেন না। মমতা সুপ্রিম কোর্ট মানেন না। তিনি দেশের সংবিধানটাই মানেন না। সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এর ফল তিনি পাবেন।’’
এই প্রসঙ্গে মাননীয় রাজ্যপাল বলেছেন “আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার এই বিবৃত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করছি”
তিনি আরো বলেছেন , ” আমাদের জাতীয়তাবাদকে কখনই আপস করতে হয় না। জাতি সর্বদাই প্রথম। আমি নিশ্চিত যে সিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিনীত অনুরোধটি মানবেন এবং তার রিপোর্টিত বক্তব্য তত্ক্ষণাত প্রত্যাহার করবেন। এই জাতীয় বিবৃতিতে এই মহান জাতির নাগরিক হিসাবে আমি দুঃখিত ও আহত।”
“যখন আমাদের পরিপক্ক কার্যক্ষম গণতন্ত্র সংবিধানে সকল পরিস্থিতিতে কার্যকর প্রতিকারের ব্যবস্থা করে তখন কোনও রূপে বাইরের হস্তক্ষেপ চাইতে ঐতিহাসিক ভুল হবে।”