বাঙ্গালি হিন্দুর ভাষা-দিবস শুরু হোক দাড়িভিট থেকে

এক সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অবসরে চলে যেতাম আশপাশে। মানুষের জীবন যাপনে নিস্তরঙ্গ শান্ত রূপ—দূরে ঢেউ খেলানো হিমালয়ের নীল দিগন্ত। একদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলো রায়গঞ্জের মোড় পেরিয়ে বেশ কিছু অঞ্চলে ১৪ আগস্ট নাকি পাকিস্তানের পতাকা তোলা হয়েছে! অঞ্চলটি ইসলামপুর মহকুমার অন্তর্গত। যখনকার কথা বলছি তখন ইসলামপুর মহকুমা হয়নি। জেলা ভাগ হয়নি— সবটাই পশ্চিম দিনাজপুর। এক ছাত্র তার বোনের বিয়েতে নেমন্তন্ন করল। মুসলমানদের বিয়ে দেখিনি, বিশেষত বাঙ্গালি মুসলমানের বিয়ে। কৌতুহল মেটাতে গেলাম। বললাম, রাত্রে থাকব না। সে এক আশ্চর্য অভিযান হলো। পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার বাইরে এরকম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেশি নেই। অধিকাংশ মুসলমান। ছেলেটি গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাল। একটু পরে কবরখানা। তারপর মাটি নেমে গেছে সামান্য জলা পেরিয়ে চষা জমি তারকাটা–ওপারে বাংলাদেশ। ১৯৮৪-৮৫-র কথা। অধিকাংশ মানুষ কিন্তু বাংলাভাষায় কথা বলে না। আমার ওই ছাত্রটি বলছিল কবরখানায় স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। খাসজমি দখল করার উদ্যোগ নিচ্ছে তারা। ইদানীং সেই ছাত্রটি ‘সূর্যাপুরী’ রাজ্য নিয়ে আন্দোলন করছে বলে শুনেছি। উত্তরবঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এমন মোক্ষম চাল আর হয় না। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় চেয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ আর দক্ষিণ বঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে। বন্ধু শ্রীকৃষ্ণ সিংহের সঙ্গে কথা বলে চেয়ে নেন বিহারের দুটি থানা পশ্চিমবঙ্গ-বিহারের সেই দুইমুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গ একটি অবিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক সীমানা পেয়েছিল। পশ্চিমে নেপাল, পূর্বে বাংলাদেশ এই অঞ্চল। রাজনীতি শাস্ত্রের ভাষায় ‘চিকেন নেক’ অঞ্চলটিতে গোলযোগ ঘটিয়ে দেশটিকে সমগ্র উত্তর পূর্ব অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা বিদেশি শত্রুরা করবে- তাতো প্রত্যাশিত। কিন্তু দেশীয় ‘পঞ্চমবাহিনী’ কখনো নকশালবাড়ি হাতিঘিসা—খড়িবাড়ি অঞ্চলকে অশান্ত করলে, কখনো লেউমি-পাকুড়ি থেকে ‘উত্তরাখণ্ড’ আন্দোলন ঘোষণা করলে, ক্ষীণ। হলেও স্বতন্ত্র ‘সূর্যাপুর রাজ্য’গড়ার দাবি উঠলে বোঝা যায় এসব আড়াল চেষ্টারই প্রকাশ্য উৎসাহ ফেটে পড়ত গত শতাব্দীর আটের দশকে পাকিস্তানের পতাকা তুলে ভারতের খাস জমিতে কবরখানা প্রসারিত করার মধ্য । দিয়ে।
কথাগুলো মনে পড়ল ২০১৮-র ২০ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ‘দাড়িভিট’ গ্রামের স্কুলে রাজ্য সরকারের গুলি চালনায় দুই প্রাক্তন ছাত্র রাজেশ সরকার আর তাপস বর্মণের আত্মোৎসর্গের ঘটনায়। পুলিশ গুলি চালিয়েছিল— সেকথা সমস্ত গণমাধ্যম সুস্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছে। সরকার নিশ্ৰুপ থেকেছে। সমস্ত গ্রামবাসী সমবেত ভাবে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ রেখেছে—নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে— সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। সরকারি খাস জমিতে কবরখানা- এতিমখানা-খারিজি মাদ্রাসা গড়তে তাদের উৎসাহের কমতি নেই।
কী ছিল সেদিন দাড়িভিট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের দাবি? তারা চেয়েছিলেন স্কুলে বহু জরুরি বিষয়ের শিক্ষক নেই। ভূগোলকম্পিউটার আর বাংলা পড়াবার শিক্ষক নেই। বিশেষত বাংলার শিক্ষক চাই। পরিবর্তে তারা পেয়েছেন একজন উর্দু শিক্ষক! জানা গেল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উর্দু শিক্ষকের চাহিদা। জানায়নি; জানানোর প্রশ্নই নেই— ওই স্কুলের কেউ কস্মিনকালে উর্দু পড়তে চায়নি। গ্রামটির আশপাশে তো উর্দুভাষী ছাত্র-ছাত্রী নেই! তবে কেন এই আশ্চর্য সিদ্ধান্ত ? মুখ্যমন্ত্রী বললেন, রাজ্যে উর্দু অন্যতম ভাষা। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেসব অঞ্চলে শতকরা দশভাগ বা তার বেশি উর্দুভাষী বাস করে– সেখানে ‘উর্দু অ্যাকাডেমি’ গড়ে তোলা হবে। বস্তুটি কী তা জানার জন্য কলকাতা আসানসোল অঞ্চলে মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই দেখতে পাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর হিজাব নকাব পরিহিত মোনাজাতের ভঙ্গি আর বহু নেতার মাথায় কুরুশ-টুপি পরে হাসিমুখে আদাব করার ছবি দেখতে পাবেন। কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসা দেশি-পলি-ক্ষত্রি, নমঃশূদ্র-মালো-কৈবর্ত- ভূইমালি-রাজবংশী অধ্যুষিত এই গ্রাম ও আশপাশের খানিকটা অংশ বি.এস.এফ.-এর সোনামতি ক্যাম্পের পশ্চিমের বসতিটুকুতে তো উর্দুভাষী কেউ নেই ? অনুপ্রবেশের কথা জানে না কে ? শহর কলকাতায় সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে আসুন, কাছাকাছি বিদেশি মুদ্রা পরিবর্তনের দোকান-গুমটি দেখে আসুন, খবরের কাগজে চোখ রাখুন দেখবেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীতে রাজ্যের জনবিন্যাস সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে তো বাংলাভাষারই দাবি ওঠার কথা ! হলো না কেন? একটু খতিয়ে দেখা দরকার।
কাটিহার-কিষানগঞ্জ থেকে আসা উর্দুভাষা ভাষীরা তো আসছেই। অন্যদিকও আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল আনসার-আলবদার-রাজাকারের দল। তারা অধিকাংশই উর্দুভাষী। ১৯৪৬-এ বিহারের দাঙ্গার পর অনেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ খুলনার চটকলে, কারখানায় চাকরি করত তারা। এইসব জঙ্গি মনোভাবাপন্ন মানুষগুলি পাকিস্তানি সৈন্যদের হয়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ‘ঘাতক-দালাল’ছিল। বন্ধু সহযোদ্ধা শাহরিয়ার কবির দীর্ঘদিন ধরে এদের বাংলাদেশ সরকার যাতে শাস্তি দেয় সে দাবি করে আসছেন। মুজিবুর রহমান এদের নির্দিষ্ট করে বন্দি করার কাজ করেছিলেন। এরাই দীর্ঘযাত্রা (লং মার্চ) করে স্থলপথে করাচি পর্যন্ত যেতে চেয়েছিল। ‘মুহাজিরদের এই আন্দোলনের ফল ভুগছি আমরা। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী সমস্ত জেলায় এরা এসে জমি জায়গা দখল করছে—জালটাকা পাচার করছে, গোপাচারে এরা অগ্রসর। তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক-রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নগদ বিনিময় কাটমানি আদান-প্রদানের সংস্কৃতি। দাড়িভিটের ঘটনাটি প্রতীকের মতো হলেও একে বলবো পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গভাষা রক্ষার আন্দোলনের উজ্জ্বল নিদর্শন।
কলকাতা শহরের ‘ভাষা উদ্যান’-এ সেজেগুজে ফুল ছিটিয়ে আসা যে বুদ্ধিজীবীরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন তাদের মনে পড়ে না দাড়িভিটের কথা। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারি তো পাকিস্তান সরকারের জোর করে উর্দু চাপানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল? অসমে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনটিকে ‘ভাষা আন্দোলন’ বলে ধরে নিয়ে তাঁরা যে ২০ সেপ্টেম্বরের দাড়িভিটের বাঙ্গালি হিন্দুর ‘ভাষা আন্দোলনকে উপেক্ষা করতে চাইছেন নির্লজ্জ তোষণের জন্য। তাদের মনে পড়েনা ১৯ মে-র কথা? শিলচরে ১১ জন ভূতাত্মার আত্মদানের কথা মনে করলেও যে মুসলমান তোষণের বিষয়টি আড়ালে চলে যায় ?
বদরুদ্দিন উমর বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের উপর তথ্যপূর্ণ বই লিখেছেন। সে বইতে ভাষা আন্দোলনের একটি সমাজ বাস্তবতার দিক উঠে এসেছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ মোরেলগঞ্জ গ্রামে চলছিল কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ (Food for work) কর্মসূচি। জেলা খুলনা। নিঃস্ব হতদরিদ্র গ্রামীণ মুসলমানরা সেদিন ধর্মঘট করেছিল। আসলে তাদের মনে হয়েছিল পরের প্রজন্ম মাতৃভাষায় পড়াশুনো করলেও উর্দুভাষী পাকিস্তানের উচ্চবর্গের শাসনে তারা চাকরি পাবেনা–সম্মানের জীবন যাপন করতে পারবে না। যেভাবে লিখলাম, সেইরকম স্পষ্টভাবে নিশ্চয় তারা ভাবেনি—কিন্তু জনপ্রতিক্রিয়া যখন হয় তখন এভাবেই হয়।
এবার আসুন ২০-২১ মে ১৯৬১-র দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দি- নিলামবাজার-করিমগঞ্জ অঞ্চলে একটি ঘটনা পরম্পরার কথায়। বঙ্গভাষী মুসলমানরা সেদিন নিজেদের অসমীয় ভাষী বলে ঘোষণা করে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। অর্থাৎ পূর্বপাকিস্তানে বঙ্গভাষী মুসলমানরা যেভাবেবঙ্গ ভাষানুগত্য দেখিয়েছে অসমে তারা সেই আনুগত্য দেখায়নি। এ থেকে স্পষ্টহয় বঙ্গভাষী মুসলমান বলে কিছু হয় না। আশ্চর্যের কথা বরাক উপত্যকার বাঙ্গালিরা অনেকেই এনিয়ে কথা বলেন না।
বছর দুই আগে মুর্শিদাবাদে একটি আলোচনা সভা হয়, কলকাতার একটি সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতার খ্যাতিমান লেখক আবুল বাশার। বাংলাদেশের বহু গবেষক এসে ‘প্রমাণ করেছিলেন যে বাংলা ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত নয় ফারসি ভাষার সম্পর্ক বেশি। বাংলা আসলে এদেশের মুসলমান নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি একটি ভাষা! উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন গৃহীত হয় পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায়। তখন বামপন্থী শাসন। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ পর্যন্ত জানি না, সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয় কী বস্তু! জানি না, যদি সংখ্যালঘুই হয় তবে কেন ওখানে মুসলমান ছাড়া অন্য কোনো বৌদ্ধ বা খ্রিস্টধর্মের মানুষের স্থান হয় না?
এই বিস্তৃত পটভূমিতে দাড়িভিটের ‘২০ সেপ্টেম্বরের ভাষা দিবস’-কে স্মরণ করতে হবে। গত বছর বাঙ্গালি হিন্দুর ভাষা আন্দোলন হিসেবে দিনটি পালন করা হয়। কলকাতার রামমোহন হলে সেই অনুষ্ঠানে রাজেশ সরকার আর তাপস বর্মণের আত্মীয়রা এসেছিলেন। এবছর অনুষ্ঠানটি হবে দাড়িভিট গ্রামে। জাতির এই আত্মাহুতি বৃথা যাবে না। দেশ ভাগের পর বহু আশা, বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গে পা রেখে আমাদের বহু বঙ্গভাষী হিন্দু পূর্বজ আশা করেছিলেন, নিজেদের ধর্ম-সংস্কৃতি-ভাষা-ঐতিহ্য রক্ষা করা যাবে। তারা সেদিন ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি নিজ বাসভূমে এরকম ভয়ংকর তোষণ শুরু হবে। রাজ্য সরকার তার পুলিশ প্রশাসন নিয়ে। মাতৃভাষার দাবিতে জড়ো হওয়া কচিকচি ছেলে-মেয়েদের উপর বেপরোয়া হয়ে বড়ো বড়ো গাড়ি চালিয়ে দেবে। পুলিশ যমদূতের মতো হাতে তুলে নেবে অস্ত্র। জোর করে উর্দু শিক্ষক নিয়োগ করবে— তা মেনে নিতে না পারলে মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে।
ইসলামপুর থেকে দাড়িভিট যাবার পথে পাবেন জীবনমোড়, চারখাম্বা, ভীমরুল্লা, চিমটি, সামসেরগঞ্জ— সমস্ত এলাকায় পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো (ইদানীং ঘাসফুল) জমাটবদ্ধ। বিধর্মী অনুপ্রবেশকারী। দিনের চেয়ে রাত্রে এসব অঞ্চল বেশি চঞ্চল। ঘন ঘন বাজে মোবাইল। আসা যাওয়া করে অবৈধ চালানকারীদের মোটর সাইকেল আর নানান বাহন। দাড়িভিট যদি জাতীয়তাবাদী হয়, যদি সমর্থন না করে এই নৈরাজ্য ? তাহলে ? কী হবে? তার প্রমাণ পেয়েছে ২০১৭-র ২০ সেপ্টেম্বরের দুটি তাজা তরুণ। তারাও ছাত্র ছিল। পশ্চিমবঙ্গের সাদা ধুতি পঞ্জাবি বুদ্ধিজীবীরা চশমা মুছেও এদের দেখতে পান না! অথচ তাদের মনে পড়েনা—১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে যারা মারা গেছে তাদের বেশ কজনই তখনকার পশ্চিমবঙ্গের যুবক। তখনও মুসলমানের পক্ষে সীমান্ত ছিল উন্মুক্ত, আজও তাই। উদ্বাস্তুরাই রেললাইনের পাশে, নয়ানজুলির উপরে পশুর জীবনযাপন করতে বাধ্য? তাদের জন্য কোনো সমবেদনা নেই! এই ঘৃণ্য চতুর লোকগুলিকে বুদ্ধিজীবী বলে? জানি না।
দোলঞ্চার নাম আমরা শুনিনি অনেকেই। দোলঞ্চা ছোট্ট একটি অকিঞ্চিৎকর নদী। এর কুলের শ্মশানঘাটে শুয়ে আছে রাজেশ সরকার আর তাপস বর্মণের দেহ। তারা বাংলাভাষায় পড়তে চেয়েছিল। তাদের বুকে গুলি চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ‘জয়বাংলা’ বলা ভণ্ড অত্যাচারী সরকার। কোনো ঘৃণাই এদের জন্য যথেষ্ট নয়। ছোট্ট এই নদীর ওপারে ‘সোনামাতি ক্যাম্প’ সীমা সুরক্ষা বল (বি.এস.এফ.)- এর জওয়ানরা থাকেন। তার পরেই কাটাতারের বেড়া–ওপারে বাংলাদেশ। তারা জল বলে না বলে পানি, স্নানকে বলে গোসল, জল বলবে না বলে জলখাবারকে বলে নাস্তা, হাতমুখ ধোয়াকে বলে অজু করা, রামধনু বলবে না বলে রংধনু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ভাষাভঙ্গি যথাসম্ভব নকল করে বাংলাভাষাকে বলাৎকার করছে। এই উর্দু প্রভাবিত বাংলা বা উর্দু শিক্ষকের কাছে ‘মোল্লা-বাংলা পড়তে চায়নি ওরা— রাজেশ সরকার আর তাপস বর্মণ তাই শুয়ে আছে দোলোঞ্চা নদী তাদের সমাধির মাটি ছুয়ে প্রবহমান। আমরা এই দুই আত্মোৎসর্গী মহৎ প্রাণকে ভুলবো না। জানি, কালের প্রবাহে এই দুঃশাসনের রাক্ষসীবেলা শেষ হবে।তখননিশ্চয় বিচার হবে। তখন নিশ্চয় ২১ ফেব্রুয়ারি নয়, ২০ সেপ্টেম্বরই হবে বাঙ্গালি হিন্দুর প্রকৃত ভাষা দিবস। যে ভাষা গঙ্গার মতো পবিত্র। আজ থেকে হাজার বছর আগে এই ভাষার প্রশংসা করে বঙ্গাল কবি লিখেছিলেন :
ঘন রসময়ী গভীরা বক্রিসমুভগোপজীবিতা কবিভিঃ।
অবগাঢ়া চ পুনীতে গঙ্গা বঙ্গালবাণী চ।
অর্থাৎ গঙ্গা আর বঙ্গালবাণী উভয়েই ঘনরসময়ী, গভীর, সুন্দর, গতিবিভঙ্গের, উভয়েই কবিদের প্রিয়। আর দুটিতেই অবগাহন করলে পুণ্যলাভ হয়। জমজমের জলের মরুভূমির উটের কাটাগাছের সঙ্গে এই পবিত্রতার স্বাদ পাওয়া অসম্ভব!
ড. অচিন্ত্য বিশ্বাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.