কখনও রেল রোকো আন্দোলন, কখনও প্রশাসনিক দপ্তর ঘেরাও অভিযান। দীর্ঘ কয়েকদশক ধরে জাতিসত্ত্বা ও কুড়মি জাতিকে তপশীল জাতির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কুড়মি সমাজের লক্ষ লক্ষ মানুষ আন্দোলন করলেও আজও দাবি আদায় করে উঠতে পারে নি কুড়মি সমাজ। ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলা এবং ঝাড়খণ্ড ও ঊড়িষ্যা রাজ্যে বসবাসকারী কুড়মি জাতি ভারতবর্ষের অন্যান্য আদিম জনজাতিগুলির মধ্যে অন্যতম। তবুও এই কুড়মিদের নিয়ে উদাসীন রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই এবার গর্জে উঠেছে কুড়মি সম্প্রদায় সহ জঙ্গলমহলের আদিবাসী মানুষ।
এতকাল কুড়মি সহ আদিবাসী সমাজকে ব্যবহার করে এসেছে রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো। ‘হিউম্যান ক্যাটল’ মনে করে কলকাতা থেকে রাঢ়বঙ্গে ভোট রাজনীতিতে আসা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলছে জঙ্গলমহলের কুড়মি ও আদিবাসী সম্প্রদায়কে। হাটে গবাদি পশু কেনা বেচার মত ভোটের আগে থেকেই তাদেরকে কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। কিন্তু আর নয়। দীর্ঘকাল ধরে আদিবাসী কুড়মি সমাজ জাতিসত্ত্বা সহ একাধিক দাবি নিয়ে লড়াই করলেও কোন রাজনৈতিক দলই কর্ণপাত করেননি তাদের কথায়। তাই এবার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। বাঁকুড়ার রাইপুরে এক জনসভায় চরম হুঁশিয়ারী দিলেন কুড়মী সমাজের কেন্দ্রীয় নেতা অজিত প্রসাদ মাহাতো।
একদিকে যখন জঙ্গলমহলে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার সারছেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ঠিক তখনই জঙ্গলমহলে মঞ্চ বেঁধে জেহাদ ঘোষণা করছেন কুড়মি নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অজিত প্রসাদ মাহাতো, রাজ্য নেতৃত্ব পরিমল মাহাতোদের সাফ জবাব রাজনীতি আর জাতিসত্ত্বা সম্পূর্ণ আলাদা। কুড়মি সম্প্রদায়ের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে আগে। তাই আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই চললেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া মেলেনি কিছুই। লোকসভা নির্বাচনের আগে কুড়মি সমাজের এই আন্দোলন যে জঙ্গলমহলে যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। জঙ্গলমহলে ভোট প্রচারে আসা রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা যতই জঙ্গলমহলের কুড়মি ও আদিবাসী সমাজের মানুষদের ভোটের আগে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করলেও এত সহজে যে এবার আর বরফ গলবে না তা কুড়মি নেতৃত্বের বার্তাতেই পরিষ্কার।