উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে বৃহস্পতিবার প্রাণ হারিয়েছেন তিন দিনের শিশু। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণেই বিনা চিকিৎসায় ওই শিশুর প্রাণ গিয়েছে বলে উঠেছে অভিযোগ।
জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে মানতে নারাজ প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। এর পিছনে তৃণমূল কংগ্রেসের সস্তার রাজনীতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংসদের উচ্চকক্ষের এই প্রাক্তন সদস্য। শুক্রবার সকালে সংবাদপত্রে শিশু মৃত্যুর খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরে এই বিষয়ে নিজের অভিমত ফেসবুকে লিখেছেন কুণাল।
তিন দিনের ওই শিশুর মৃত্যু নিয়ে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে যে সাগর দত্ত একটা মেডিক্যাল হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও শিশুটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়ল কেন? এই প্রনশ্র জবাবও দিয়েছেন তিনি, “কারণ সাগর দত্তে পেডিয়াট্রিক বিশেষ ভেনটিলেটর নেই। কেন নেই? কারণ কেনা হয় নি।”
এরপরেই সাগর দত্ত হাসপাতাল সম্পর্কে নিজের খেদ ব্যক্ত করেছেন প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি লিখেছেন, “এই সাগর দত্ত হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে আমি আমার সাংসদ তহবিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ঠিকঠাক কাজ করলে আরও দিতাম। যেমন আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানে দিয়েছি। অনেক লড়াই, হাইকোর্টের যুদ্ধ শেষে টাকাটা অনুমোদিত হয়ে আসে।” পাশাপাশি তিনি আরও লিখেছেন, “অথচ তারপর সাগর দত্ত হাসপাতাল জানায় তাদের সব আছে। আমার বরাদ্দ টাকা লাগবে না। লিখিতভাবে তাদের আধিকারিক এটা নোডাল এজেন্সি কলকাতা পুরসভাকে জানিয়ে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে দেন। আমি বিস্মিত, একটা হাসপাতাল কী করে টাকা ফেরাতে পারে ! তাদের কি সব আছে?”
কিন্তু কেন এমন হয়েছিল? সেই বিষয়ে কুণালের অভিমত, “আমি দলের গুড বুকে ছিলাম না বলে হাসপাতালে সস্তা রাজনীতি হয়েছে। উন্নয়ন উপেক্ষা করে দলবাজির অসভ্যতা হয়েছে।” একই সঙ্গে আক্ষেপের সুরে তিনি আরও লিখেছেন, “সেদিন সেই টাকায় যদি এই ধরণের যন্ত্র কেনা যেত, তাহলে হয়ত শিশুটি মারা যেত না। টাকা ফেরত! দিল্লির টাকা এলে তো রাজ্যের লাভই হত। বহু জায়গায় এসব হয়েছে। আমি লড়েছি, লড়ছি।”
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন সাংসদ কুণাল ঘোষ। কারণ তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়ে তিনি লিখেছেন, “এই বিশেষ শিশুমৃত্যুর জন্য আমার মতে দায় এই হাসপাতাল সংক্রান্ত প্রশাসনেরও। যে ব্যক্তি চিঠি লিখে টাকা ফেরত পাঠান, খুনের জন্য দায়ী প্রথমে তিনি।” সেই সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের কাছে তাঁর প্রশ্ন, “এখন শুধু চিকিৎসকদের কর্মবিরতির দিকে আঙুল তোলার চিত্রনাট্য লিখলে হবে?”
সাধারণ মানূষের স্বার্থে চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলেছেন কুণাল। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার কথাও বলেছেন তিনি। সবশেষে তিনি লিখেছেন, “হাসপাতাল সচল হোক। কিন্তু সেই সঙ্গে যেন সাগর দত্ত হাসপাতালের এই ঘৃণ্য রাজনীতির কথাও সবার বিবেচনায় থাকে।”