যা হচ্ছে ত্রিপুরায় তা ঠিক নয় । যিনিই করুন যাঁরাই করুন । যাকেই করুন । এ কথা লিখতে হবে চোখ কান খোলা রাখলে ।
আবার চোখ কান খোলা রাখলে এও লিখতে হবে – ত্রিপুরায় যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে । এটাই ওদের পাওনা । যে অন্যায় বাংলায় ওরা করেছেন তার জন্য এর থেকে বেশীই ওদের পাওনা ।
কেন বলছি ?
আজ কুণাল ঘোষের তাড়া খেয়ে দৌঁড়টা দেখছিলাম । থানার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বাইট দিতে গিয়ে যে দৌড়টা দিলেন অনেকদিন মনে থাকবে । কেন বলছি ?
দুটো ঘটনার কথা বলব ।
একটি দক্ষিণ ২৪ পরগণার । ভাইপোর সংসদীয় এলাকার । বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর একটি পুরো গ্রাম নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা নিল ভাইপো বাহিনী । তাঁদের অপরাধ ? ঢেলে ভোট দিয়েছে তারা বি জে পি কে । ২ রা মের রেজাল্ট বেরোনোর ঠিক পরে প্রথমেই ব্যারিকেড দিয়ে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলা হল । ১২ টি জে সি বি এনে ঢোকানো হল গ্রামে । প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার অপারেশনে নিশ্চিহ্ন করা হল ৬ টি পাকা বাড়ি, ১৭ টি ছোট বাড়ি । বাড়ির মালিকেরা তখন প্রাণ বাঁচাতে ঝোপে ঝাড়ে জঙ্গলে, দূরে আত্মীয়র বাড়ি ।
এক হতদরিদ্র সর্বস্ব খোয়ানো মানুষ কারুর কাছ থেকে আমার নাম্বার পেয়ে ফোন করেছিলেন আমাকে । তখনও তিনি নদীর ধারে পরিবার নিয়ে জঙ্গলে । খবরটি পেয়ে আমি সেদিন তিনটি কাজ করেছিলাম । বাংলার সব ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে এবং সংবাদপত্রে মেসেজ পাঠালাম । এলাকার ডিটেইলস দিয়ে । একটি সংবাদ মাধ্যমের পরিচিত সাংবাদিক পরে বললেন – সন্ময়দা লোকাল সাংবাদিককে পাঠিয়েছিলাম । সৌকত বাহিনী গ্রাম ঘিরে রেখেছে । ঢুকতে দেয়নি, ফিরে এসেছে । আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ঢুকতে । থ্যাংক ইউ, এরকম খবর পেলেই দেবেন । এগুলো ব্রেক করা আমাদের চ্যালেঞ্জ । দিন সাতেক বাদে গ্রামে ঢুকে সেই বীভৎস দৃশ্য টেলিকাস্ট করেছিল রিপাবলিক বাংলা । তারও পরে সি এন ।
আর বাকি সংবাদ মাধ্যম ? এ বি পি আনন্দ, নিউজ ১৮, ২৪ ঘণ্টা কেউ উত্তর পর্যন্ত দেয়নি । কভার করা তো দূরের কথা । পরে বুঝেছি এগুলো ব্ল্যাক আউট করার নির্দেশ ছিল নবান্নের । তাঁরা সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন, বিজ্ঞাপন সাপোর্ট ঠিক রাখতে । আনন্দবাজার, বর্তমান, এই সময়কে রিপাবলিকের ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছিলাম লজ্জা দেওয়ার জন্য । দেখেছেন কিন্তু নির্লিপ্ত থেকেছেন তাঁরা কি কারণে বলা বাহুল্য । আজ চার মাস বাদেও সেই গ্রাম প্রায় জনমানবহীন । দখল হয়ে গেছে বহু জমি, লুঠ হয়ে গেছে যা কিছু অবশিষ্ট ছিল । সেই গ্রামেরই সেই জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া মানুষটি আবার সেদিন ফোন করেছিলেন – কলকাতার ফুটপাথে নাম গোপন করে থালা বাসন ধুয়ে দিন কাটাচ্ছেন । স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে স্টেশনে এখনও রাত কাটান, দিনে তিনিও হোটেলের ঘর মোছার কাজ পেয়েছেন । পরিবারটির প্রায় দেড় বিঘে জমি ছিল গ্রামে । চাষ করতেন সেখানে । লোকমুখে শুনেছেন সবটাই দখল হয়ে গেছে । বাজারে সবজির চালু দোকান ছিল । সেটাও দখল হয়ে গেছে । বাড়ি ? স্মৃতি চিহ্নও রাখেনি সৌকতরা । দেড় তলা বাড়িটা জে সি বি দিয়ে পাশের পুকুরে মিশিয়ে দিয়েছে । এখন তাহলে ? মেয়ে দুটো আর বউটার জন্য বেঁচে থাকা । আর কি আছে জীবনে ! কথা বলতে বলতে ডুকরে উঠলেন ।
ঠিকানা দিলাম । আসতে বললাম । আসবে কথা দিল লোকটি । এখনও গলায় মৃত্যুর ভয় । অভয় দিলাম আড়াল রাখব ।
দ্বিতীয় ঘটনা । স্থান – পাণ্ডবেশ্বর । বি জে পি করার অপরাধে গ্রাম ছাড়া বহু পরিবার । প্রায় দু মাস বাদে এলাকার স্থানীয় শাসক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ঘর ছাড়ারা । শর্ত বাড়ির মহিলারা ফিরবেন । পুরুষরা নন । স্থানীয় সেই নেতার ফোনের রেকর্ডেড অডিও শুনে চমকে উঠেছিলাম । প্রথমে বিশ্বাস করিনি, করতে মন চায়নি । পরে শুনেছিলাম সম্ভ্রম বাজী রেখেই কেউ কেউ একা একা ঘরে ফিরেছিলেন শুধু ছাদটাকে ফিরে পেতে । জানিনা, আজ তাঁরা কেমন আছেন, কি ভাবে আছেন, কার কৃপায় আছেন ।
এই বাংলার চেহারা ভেবেছিলাম কোনোদিন ? কখনো ? কল্পনায় ? দু:স্বপ্নেও ? এই বাংলাকে আনন্দবাজার,এই সময়,নিউজ ১৮ এর মত বাংলা সংবাদ মাধ্যম গুলো আড়াল করেছে যত্ন নিয়ে । গত চার মাস । প্রভু যদি রুষ্ট হয়, যদি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়, কি দরকার শুধুই কোপে পড়ার । সেই বাংলার লক্ষ যন্ত্রণা নিঃশব্দে গুমড়ে কেঁদেছে কেউ তার ঠিকানা রেখেছি ?
আজ ত্রিপুরায় থানার সামনে থেকে তাড়া খাওয়া কুণাল ঘোষের ঐ ঐতিহাসিক দৌড় দেখে তাই বলতে ইচ্ছে হয় – একা নয় কুণাল, ভাইপোটাকে নিয়ে প্রাণপণে দৌড়াও ।
এই দৌড় তোমাদের পাওনা দৌড় । এই দৌড় প্রায়শ্চিত্তের দৌড় । এ যে অনেক দীর্ঘশ্বাসের ঠেলারও দৌড় ।
বোঝোনি কুণাল ? সরদার পাওনা বুঝেছ, এই পাওনাটা বোঝোনি কুণাল ? সেকি !! কিরকম ব্যবসাদার তুমি ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)