অভিনেতা তথা কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালের (Tapas Paul) মৃত্যুর জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতিকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার রবীন্দ্রসদনে দাঁড়িয়ে গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশ্যে একের পর এক অভিযোগের বাণ দিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে, মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তিকে হাতিয়ার করেই তাঁর প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুললেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রী যেমন তাপস পালের মৃত্যুর জন্য তার সিবিআইয়ের অধীনে থাকা দিনগুলিকে দায়ী করেছেন। ঠিক তেমন ভাবেই কুণাল ঘোষ তাঁর মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন রাজ্য প্রশাসনকে।
কুণাল লিখেছেন, “তাপস পালের মৃত্যু প্রসঙ্গে রবীন্দ্রসদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। তাপস পাল, সুলতান আমেদ এবং প্রসূনদার স্ত্রী পারমিতাদির মৃত্যুর পিছনে সিবিআই মামলা এবং বন্দিজীবনে হয়রানির চাপ আছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।” এরপরই অভিযোগের সুরে তিনি লিখেছেন, “এই তত্ত্ব ঠিক হলে বলতে হয় আমার মা প্রয়াত মণিকা ঘোষের অতিরিক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর জন্য দায়ী রাজ্য সরকার, রাজ্য পুলিশ এবং রাজীবকুমারসহ কয়েকজন অফিসার। আমি জ্ঞানত কোনো দোষ করিনি। আমাকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে, মামলার পর মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে।”
তাঁরর প্রতি এমন অন্যায় আচরণের জন্য তৎকালীন বিধাননগর পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে (Rajiv Kumar) বহুলাংশে দায়ী করেছেন কুণাল ঘোষ। দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় নি। আমাকে অনশন করে মাকে দেখার অনুমতি নিতে হয়েছে। এই চাপে মা আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা সঙ্কটজনক অবস্থায় যখন হাসপাতালে, তখন অনেক কষ্টে মাত্র দুই ঘন্টার প্যারোল আদায় করে দেখতে গেছিলাম। পুলিশের বাড়াবাড়িতে মাত্র কুড়ি মিনিটে আমাকে চলে যেতে হয়েছিল। সেটাও কলকাতা পুলিশ। পরে মা আর বেশিদিন বাঁচেন নি। ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। আমার জামিনের পর মাকে আর বেশিদিন পাই নি। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মারা যান।”
নিজের মায়ের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে কুনাল আরও লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমার মাকে ভালোভাবে চিনতেন। তাঁর বিবেচনায় আমার মায়ের মৃত্যুর কারণ স্থান না পাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রথম থেকেই রাজ্য পুলিশের সেই কুৎসিত, পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তের সূত্রেই পরবর্তীকালে আমিও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির মুখে পড়েছি। সেই তদন্ত এখনও চলছে। হয়রানি চলছে। হয়ত আরও বাকি। সে আমি লড়েছি, লড়ছি, লড়ব। কিন্তু বৈষম্যমূলক পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি হজম করতে পারলাম না।” তাঁর মতে, “অভিযুক্তদের হয়ে কথা বলতে গেলে নিরপেক্ষ থাকা বাঞ্ছনীয়।”
কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী এখনও বন্দি থাকা এক সাংবাদিকের কথা বলেছেন। আমি যতদিন বন্দি ছিলাম, তখন আমার কথা মনে পড়ে নি কেন? একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম নীতি হয় না কি? এখন যিনি বন্দি সাংবাদিক, তাঁর সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য রাখা উচিত নয়।” তবে এই পোস্টে প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েও তিনি লিখেছেন, “আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে এই পোস্ট করলাম। নিজেকে আজও কঠিন দিনের পরিবর্তনের আন্দোলনের সৈনিক মনে করি।”
এই ফেসবুকের শেষে একটি পুনশ্চ পর্ব লিখেছেন তিনি। যেখানে এই প্রাক্তন
সাংসদ আক্রমণ করেছেন তাপস পালের শেষ যাত্রা হাজির বেশকিছু বিশিষ্ট
ব্যক্তিত্বকে। তিনি লিখেছেন, “যাঁরা আজ তাপস পালের মরদেহে মালা দিয়ে
কান্নাকাটি করছেন, নানা স্মৃতিচারণের আদিখ্যেতা করছেন, এঁদের অধিকাংশ
সত্যিই অভিনয় করছেন। তাপসদার বন্দিদশার কঠিন দিনে, অন্তত সহকর্মী হিসেবেও
যাঁরা যোগাযোগ রাখেন নি, সহমর্মিতা জানান নি, সেইসব সুবিধেবাদী ধান্দাবাজ,
মুখোশধারী আজ প্রয়াত তাপসদাকে ঘিরে বাংলার মানুষের আবেগের মঞ্চকে কাজে
লাগিয়ে নিজেদের প্রচার ও স্বার্থসিদ্ধি করতে গেছেন। এঁদের জানাই ধিক্কার।
তাপসদা দোষী না নির্দোষ, সেই বিতর্কে ওঁদের ঢুকতে হত না। কিন্তু পরিচিত কেউ
বিপদে পড়লে খোঁজ রাখাটা মনুষ্যত্বের মধ্যে পড়ে। তাপসদা আইনি বিপদে ছিল,
শারীরিক ও মানসিকভাবেও। তখন যাঁরা সরে গিয়েছিলেন, আজ মিডিয়ার সামনে চোখের
জল ফেলছেন।
ছিঃ।”