অবশেষে শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তবে বাধা রইল না স্নানেও। যদিও পুণ্যার্থীদের স্নান করতে যাতে প্রশাসনের তরফে নিরুৎসাহিত করা হয়, সে জন্যও নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য যে সন্তুষ্টজনক নয়, তা আগেই জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সাত তারিখের শুনানিতে আদালত সরকারের সওয়াল শোনার পরে বলে, “সরকার বা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা নিয়ে আদালতের আগ্রহ নেই। কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অগ্রাধিকারের বিষয়।” প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, “একসঙ্গে অনেক মানুষ জলে স্নান করলে ড্রপলেট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নিয়ে দুপুর দুটোর মধ্যে হলফনামা জমা দিক। তারপর এই মামলা নিয়ে আদালত তার নির্দেশ দেবে।”
এর পরে হলফনামা জমা দিয়ে রাজ্য জানায়, ই-স্নানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে পুণ্যার্থীদের জন্য। আজকের শুনানিতে বিচারপতি অরিজিত ব্যানার্জি মুখ্যসচিবের রিপোর্ট দেখে বলেন, “রাজ্য ই-স্নানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এটা সমস্যার উত্তর হতে পারে না।” তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনার স্বাস্থ্যসচিব কি এক্ষেত্রে কোনও বৈজ্ঞানিক উপায় বের করতে পারবেন?” এর উত্তরে রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত বলেন, নদী থেকে দূরে ব্যবস্থা হয়েছে স্নানের।
এর পরে ফের হলফনামা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত, তার পরে বিকেল ৪টেয় আবার শুনানি হয়। সেখানেই আপাতত অনুমতি দেয় আদালত। জানায়, যাঁরা ই-স্নান নেবেন তাঁদের বিনামূল্যে মেলা প্রাঙ্গনেই তা দিতে হবে।
জানা গেছে, রাজ্য এমনভাবেই সব ব্যবস্থা করেছে যাতে পুণ্যস্নান ই-স্নানের মাধ্যমেই করা যায়। তাই আপাতত রাজ্যের ব্যবস্থাতেই ভরসা রাখার কথা বলেছে আদালত।
গঙ্গাসাগরে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। কথায় বলে, সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কার্যত সব উৎসবই শিকেয় উঠেছে। ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেন আসার পর বিপদ আরও বেড়েছে বলেই মত অনেকের। ইউরোপের বহু শহরে নতুন করে লকডাউন জারি করতে হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাকারী তরফের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলা আইন ১৯৭৬-এ উল্লেখ আছে মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বিশেষ কারণ দেখিয়ে রাজ্য এই মেলা বন্ধ করতে পারে। সেই অধিকার আছে এই আইনে।”
যদিও শেষমেশ মেলা বন্ধ হল না। ই-স্নানের উপর ভরসা রেখে, শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।