কে সত্যি কথা বলছেন? রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, নাকি প্রশাসনিক প্রধান?
ডাক্তার নিগ্রহকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অচলাবস্থা কাটেনি। রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবায় তীব্র সংকট অব্যহত রয়েছে। তার মধ্যেই একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বড় রকমের অভিযোগ করলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
রাজভবনের তরফে প্রকাশ করা ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এনআরএস হাসপাতালে ডাক্তার নিগ্রহকে কেন্দ্র করে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আচরণে তিনি যে দুঃখ পেয়েছেন তাও এ দিন তাঁকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
রাজভবন ওই বিবৃতির প্রকাশের মুহূর্ত পরে ঘটনাচক্রে এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে রাজ্যপালের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁকে গোটা পরিস্থিতি বোঝানো হয়েছে এবং তিনি তা বুঝতে পেরেছেন। হি ইজ কনভিনসড।
যদিও এর পরেও রাজভবন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, রাজ্যপালের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। এও বলা হচ্ছে, গত দু’দিন ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল।
কে সত্যি কথা বলছেন, এর থেকে স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যপালের অভিযোগ যদি সত্যি হয় তা হলে তা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। ব্যাপারটা এরকমই যে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন না। তাঁদের কথায়, এটা ঠিক যে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির কোনও প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। তবে সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের মাথা তিনিই। তাই সংসদে বা বিধানসভায় বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল সব সময় ‘আমার সরকার’ বলেন।
রাজভবনের বিবৃতি অনুযায়ী চলতি সংকট নিয়ে এর আগে একবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এ দিন ফের চিঠি দেন। তাতে তিনি লিখেছেন, “আমি আপনাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে। কিন্তু যতদূর বুঝতে পারছি আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সঙ্গে সরকারের এখনও কোনও মিটিং হয়নি”।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যপাল আরও বলেছেন যে তিনি আন্দোলকারী ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ডাক্তারদের তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁদের অভাব অভিযোগ সরকারকে জানাবেন। সেই সঙ্গে ডাক্তারদেরও দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যপাল এও পরামর্শ দেন, ডাক্তারদের নিরাপত্তা বাড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে ডাক্তারদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বাড়াতে হবে সরকারকে। চিঠির শেষে রাজ্যপাল এও জানিয়েছেন, সরকার অচলাবস্থা কাটাতে কী কী ব্যবস্থা নিল তা যেন অবশ্যই তাঁকে জানানো হয়।
রাজ্যপালের এই চিঠি ও ক্ষোভ নিয়ে তৃণমূলের মমতা ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, দিদি বুঝতে পারছেন সরকারকে বেকায়দায় পড়তে থেকে রাজ্যপাল আরও অস্বস্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর এই সব কাজকর্মের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই হয়তো কৌশলে পা ফেলছেন দিদিও।