ভোটের পর বাংলা বিজেপির প্রথম কার্যকরী কমিটির বৈঠক ছিল মঙ্গলবার। সেই বৈঠকের শুরুতে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, কাশ্মীরের চল্লিশ বছরের সন্ত্রাসকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বাংলা। বৈঠকের শেষ বক্তা হিসেবে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও বড় সময় খরচ করলেন রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে।
এদিন নাড্ডা বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ভোটের পরে হিংসার ঘটনা খতিয়ে দেখতে বাংলায় টিম পাঠিয়েছিল। আমি শুনলাম আজকে সেই টিম রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে তাঁরা যা লিখেছেন তা কোনও সভ্য সমাজে হয় না।
তাঁর কথায়, পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়েছে, কোথাও সন্ত্রাস হচ্ছে না। এমনকি যে কমিউনিস্টরা বিজেপির মতাদর্শগত শত্রু সেই কেরলেও সন্ত্রাসের ঘটনা নেই বলে দাবি করেন বিজেপি সভাপতি। একমাত্র বাংলাতেই হিংসার রাজত্ব চলছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। নাড্ডা বলেন, যেখানে তৃণমূল সেখানেই নাড্ডা।
বাংলায় কী কী হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন নাড্ডা?
তাঁর কথায় বাড়িঘর লুঠ, মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া, ঘরছাড়া করা, জরিমানা আদায় এসবই চলছে বাংলায়। তাঁর কথায়, সমাজবিরোধীদের নিয়ে উন্মত্ত তাণ্ডব চালাচ্ছে তৃণমূল। আর সব থেকে লজ্জার কথা হল বাংলার পুলিশ বোবা-কালা হয়ে বসে রয়েছে।
বিজেপি সভাপতি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় টিম, এসসি কমিশন, এসটি কমিশন, মহিলা কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে সব মিলিয়ে আড়াই হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। হুঁশিয়ারির সুরেই নাড্ডা বলেন, কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আমরা দরকারে আদালতে যাব, মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করব,গণতান্ত্রিক উপায়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেদিন বিধায়কদের নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন, সেদিনই বলেছিলেন গত দশ বছরের বিরোধী দলগুলির মতো বিজেপিকে ভাববেন না। তা ভাবলে ভুল হবে। নাড্ডাও এদিন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, মমতা সরকারের উগ্র বিরোধিতার পথে হাঁটবে গেরুয়া শিবির।
‘ছদ্ম মানবাধিকার কর্মীদের’ উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে নাড্ডা বলেন, “আজকে কোথায় গেলেন তাঁরা? বিজেপি শাসিত রাজ্যে একটা ঘটনা ঘটলে যাঁরা হইহই করে নেমে পড়েন তাঁরা কোথায়? বাংলায় বেছে বেছে তফসিলি জাতি, উপজাতি, দলিত, মহিলাদের উপর আক্রমণ হচ্ছে কিন্তু তাঁদের দেখা নেই। বাংলার বিজেপি কর্মীদের ময়দানে নেমে ছদ্ম মানবাধিকার কর্মীদের’ মুখোশ খুলতে হবে।”
এদিনও দুর্নীতি নিয়ে মমতা সরকারের সমালোচনা করেন নাড্ডা। তাঁর কথায়, “দুর্নীতি, মমতা আর তৃণমূল সমার্থক শব্দ। আগে চাল, ত্রিপল চুরি করেছিল। এখন ভ্যাকসিন নিয়েও জালিয়াতি করছে। যা কোথাও হয়নি তা বাংলায় হয়েছে। এমন দুর্নীতি যে তৃণমূলের সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকেই ভুয়ো ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়েছে।”
নাড্ডার বক্তৃতা নিয়ে তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন, “ভোটের আগে যে সিলেবাস মুখস্থ করে প্রচারে আসতেন বহিরাগত নেতারা সেগুলো এখনও ভোলেননি। গো হারা হারের পরেও ভাঙা রেকর্ডের মতো বাজিয়ে চলেছেন। এই নেতাদের কথা বাংলার মানুষ শোনেনি, শুনবেও না!”