কলকাতার এক এগিয়ে থাকা কাগজে প্রথম পাতায় প্রকাশিত হল এক বীভৎস ছবি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মুণ্ডহীন মূর্তিতে ফুলের মালা দেওয়া। এই ছবির বীভৎসতা যেন ১৪ মে রাতের কলঙ্কের থেকেও বেশি দগদগে। ১৫ তারিখে কলকাতার অনেক বড় রাস্তায় একটি রাজনৈতিক দল আগের রাতের মূর্তিভাঙা টুকরোগুলির ছবি দিয়ে প্রচার করেছে। বাংলার মানুষের কলঙ্ককে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। প্রশ্ন খবরের কাগজের করুণ পরিণতি নিয়ে। সংবাদ পত্রের ‘নিউজ এডিটর’ তো জানেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে ছিলেন। তাঁর মুণ্ডহীন মূর্তিতে তাজা মালা দেওয়া ছবি কি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছাপা যায়? সাংবাদিকতার নীতিবোধ, বাংলার রুচিবোধ কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে!
ভারতবর্ষের নবজাগরণের কান্ডারি ছিলেন যেসব মহামানব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের অনত্যম। বাংলার শিক্ষার ভিতটাই তাঁর হাতে গড়া। অসামান্য পণ্ডিত হওয়ার পরেও আপামোর মানুষের শিক্ষাদানের ব্রতে জীবনপাত করেছেন। বই রচনা করেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, একটা গোটা পরিকাঠামো তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে। তিনি যেমন বিদ্যার সাগর তেমন করুণারও সিন্ধু। বাল্যবিধবাদের অমানবিক অবস্থায় তাঁর প্রাণ কেঁদে উঠেছে। ডুবন্ত ঝিনুকের মধ্যে থেকে বের করেছেন মাইকেল মধুসূদনের মতো গজমতি মুক্তো। এই ক্ষণজন্মা মানবের এত বড় অসম্মান যারা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
একেবারে পাঠ্যপুস্তক রচনা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থসংগ্রহ, তারপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ একটা গোটা ব্যবস্থাকে দাঁড় করিয়েছিলেন মানুষটি। নিতান্ত গরীব ঘরের ছেলে, এত কষ্টে বিদ্যার্জন করে কলকাতায় আয়েসে জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু নিজের জীবনকে তিল তিল করে নিঃশেষ করে নবজাগরণের আলো জ্বালিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। তাই এই জঘন্যতম অপরাধের জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন, আর এমন শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন যে বাঙালির কয়েক প্রজন্ম তা স্মরণে রাখে।
যে মূর্তিটি গত ১৪ মে ভাঙা হয়েছে সেটি বিদ্যাসাগর কলেজের মূল বিল্ডিঙে ঢুকে একটি কাচের বাক্সে ছিল। এই ঘরে পৌঁছনোর জন্য একটি লোহার রেলিঙ দেওয়া গেট। লোহার গেট পার হওয়ার পর তিনটে দরজা। মাঝেরটি দিয়ে সকলে যাতায়াত করে, বাকি দুটি দরজা সবসময়ই বন্ধ থাকে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া সবকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে ওই লোহার শাটার দেওয়া দরজাটি বন্ধই ছিল। তাই বিকল্প রাস্তা হল ওই বিল্ডিঙের পেছনের লাইব্রেরি ও জিমন্যাশিয়াম। মূল ফটক বন্ধ থাকলে যারা ভেঙেছে তারা পিছনের দিক থেকে ওই মূর্তির স্থানে পৌঁছেছিল। ওই স্থানটি বেশ বড়সড়। মূর্তির ওপরের অংশ ভাঙার পরে ওই বড় জায়গাতে দুষ্কৃতীরা সেটা আছড়ে ভাঙতে পারত। আর সেই জায়গাটা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতার মধ্যেই ছিল। কিন্তু সেই কাজ সেখানে করা হয়নি। আর ওই সময় ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও কলেজ দিতে পারেনি। এরপরের ঘটনার ফুটেজ আছে। দুষ্কৃতীরা মূর্তির ওপরের অংশ আছাড় মেরে ভাঙছে।
এই ঘটনার অপরাধীদের শাস্তি পেতেই হবে। যদি বাংলার আজকের সমাজ এবিষয়ে সরব না হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের ক্ষমা করবে না। এই সত্য উদ্ধারের জন্য বাংলার সচেতন প্রতিটি মানুষের সংকল্প নেওয়া উচিৎ। ওই ঘরটিতে দুষ্কৃতীরা কিভাবে ঢুকেছে? এই সবকিছু পূর্বপরিকল্পিত কিনা? কেন অচল হয়ে গেল কলেজের ভেতরের সিসিটিভি ক্যামেরা? এসবের উত্তর পাওয়া সম্ভব। আজকে প্রযুক্তির যুগে এ রহস্য সমাধান মোটেই কঠিন নয়। কেবলমাত্র প্রশাসনের ইচ্ছার প্রশ্ন। প্রশাসনের ইচ্ছাকে কাজে রূপ দিতে পারে কেবল বাংলার সচেতন সমাজ। যাদের ভোটের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, বাংলা ভাষার সঙ্গে, ভারতবর্ষের সঙ্গে, দেশপ্রেমের সঙ্গে আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্গে হৃদয়ের টান আছে। সারা রাজ্য জুড়ে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তির দাবি ওঠা উচিৎ। প্রকৃত ঘটনা অবশ্যই কিছু লোক দেখেছেন। পুলিশ বিজেপি’র ১১৬ জন কর্মী সমর্থককে গ্রেফতার করেছিল। তাদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি কর্মী ১৫ মে জামিন পায়নি। পুলিশের হিসেব মতো এরা সত্যি ঘটনা জানে। হিসাব মতো শাসকদলেরও কিছু সমর্থক মানুষও ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। যদিও একটি অনুমোদন পাওয়া শোভাযাত্রার বিরোধিতা করলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে, থানায় নিয়ে নাম–ধাম নথিভূক্ত করে ছেড়ে দেয়। সেই নথিভুক্ত প্রত্যক্ষদর্শী যারা গোলমাল করে বিদ্যাসাগর কলেজের ভিতরে চলে গিয়েছিল তাদের নামের তালিকা অবশ্যই পুলিশের কাছে থাকা উচিৎ। সেইসঙ্গে নেতৃস্থানীয় দুই–চারজন, যারা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে, পরে বলেছেন তার হাতে আগেও চিড় ছিল। যারা শাসকদলের সমর্থক, কলেজের বিভিন্ন অংশ যারা রাত পর্যন্ত খুলে রেখেছিলেন, তারা সকলে সঠিক ঘটনাটি জানেন।
আজ বাংলার সবপ্রান্ত থেকে, সব স্তর থেকে দাবি ওঠা প্রয়োজন এদের সকলের অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বয়ান নথিভুক্ত করা হোক এবং বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। একটি পদ্ধতি অবশ্যই পলিগ্রাফ বা লাই ডিটেক্টর। ওই ধৃত ৫৮ জন বিজেপি এবং সেইসঙ্গে প্রায় ৫০ জনের মতো তৃণমূল সমর্থক, কলেজ কর্মচারীকে বাধ্য করা উচিৎ পলিগ্রাফ টেস্টিং পদ্ধতিতে নিজের বয়ান দিতে।
এই ঘটনায় অভিযোগের তির যাদের দিকে প্রথমে গিয়েছিল এবং বাংলার প্রচার মাধ্যম জোরদার ঢাক পেটাচ্ছিল সেই বিজেপি’র নাম কার্যকারণের ভিত্তিতেই ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে গেছে। প্রথম কারণ হল, উদ্দেশ্য। আইনের ভাষায় বলে ‘কজ অব অ্যাকশন’। সর্বভারতীয় সভাপতিকে নিয়ে ভোট চাইতে বেরিয়েছিল বিজেপি। তারা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙলে কী প্রতিক্রিয়া হবে বুঝত না? তাছাড়া বিজেপি অতিবামপন্থী দল নয়। সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত, সংস্কৃত জ্ঞানের জন্য বিদ্যাসাগর উপাধি পাওয়া কোনও মহাপুরুষকে বামদলগুলি অপছন্দ করতে পারে। সেই কারণেই ৭০ দশকে অতিবামেরা কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তির মুণ্ডচ্ছেদ করেছিল এবং সগর্বে তার দায়িত্ব নিয়েছিল। বিজেপি মূলতঃ ভারতীয় ভাবধারার প্রচার করে। তাই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার আদর্শগত কারণ তাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ওই স্থানে পঞ্চধাতুর মূর্তি গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
যারা মিছিলে বাধা দিয়েছিল তাদের মারতে কলেজে ঢুকে বিজেপি ভাঙচুর করেছে, সঙ্গে ওই প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীর মূর্তিও ভেঙেছে – এই যুক্তি তখনই খাটবে যখন দুষ্কৃতীদের মুখ বিজেপি’র ধৃত বা পরিচিত সমর্থকদের সঙ্গে মিলবে কিংবা ধৃত ৫৮ জনের পলিগ্রাফ টেস্ট ওই কথা সমর্থন করবে। সেটা দেখা গেলে অপরাধীদের চরম শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কেবলমাত্র ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান বা গেরুয়া রঙের গেঞ্জিতে যদি অপরাধী চিহ্নিত হয় তবে ঠিক হবে না।
এই জঘন্য ঘটনাতে যাদের সবথেকে বেশি লাভ হয়েছে (অন্তত তারা মনে করছেন) তারা হল শাসকদল। যারা অমিত শাহ’র মিছিলে গন্ডগোল করার জন্য ছেলেদের পাঠিয়েছে। বিজেপি’র অভিযোগ তারা ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে লাইব্রেরি বা জিমন্যাশিয়ামের দরজা খুলেছে, মূর্তিটার উপরের সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো করেছে, ঠান্ডা মাথায় মূর্তি ভেঙে বাইরে ছুড়ে ফেলেছে তারপর বাইরে সেটাকে আছড়ে ভেঙেছে। এই পরিকল্পনা রূপায়ণ কয়েকজন উগ্র কমবয়েসি ছেলে করেনি। কিন্তু যারা হাত ভাঙার নাটক করে, মাথায় ফেট্টি লাগিয়ে টিভির সামনে বারবার এসেছে তারা সকলে জানেন কে পরিকল্পনা করেছে। রূপায়ণে কে কে ছিল। সত্য সন্ধানের জন্য তারা বসুন না পলিগ্রাফের সামনে। ঠান্ডা মাথায় এই অপরাধ যদি কেউ করে তবে বাঙালি জাতির এই অবক্ষয় কয়েক দশকেও পূরণ হওয়ার নয়।
পুলিশ প্রশাসনে গোয়েন্দা দফতর কী ভূমিকা নিয়েছে? নাকি আইবি রিপোর্টের পরেও ঠান্ডা মাথায় এই ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়েছে? অনেক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর সামনেই প্রতিবাদ বা কালো পতাকা দেখানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে মিছিলের একটু দূরে দেখানোর জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। অল্প কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখাতে দিয়েই তাদের পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। কেন সর্বভারতীয় দলের সভাপতির মিছিলে ইট, পাথর ছুড়তে দিল কলকাতা পুলিশ? কী ছিল গোয়েন্দা রিপোর্ট? কে অনুমতি দিলেন বিক্ষোভ প্রদর্শনের?
বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয় ভারতবর্ষের এক মহামানবের নামের সঙ্গে যুক্ত। কে চালাচ্ছেন কলেজ? সেদিন কি কলেজ খোলা ছিল? সন্ধ্যার পর কি কোনও ক্লাস হয়? পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকার ব্যবস্থা কে করে দিল? সিসিটিভি খারাপ হলে সারাতে কত সময় লাগে? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় য়ন্ত্র দিনের পর দিন খারাপ হয়ে থাকবে? কোনও সুস্থ সারস্বত পরিবেশে কলেজের অধ্যক্ষ লজ্জায় পদত্যাগ করতেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের বাংলা শেষ হয়ে গেছে, মূর্তি ভাঙাটা নিতান্তই প্রতীকী।
আজ এরাজ্যে যারা উপাচার্য হচ্ছেন, যারা কলেজের অধ্যক্ষ হচ্ছেন তাদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় মানুষ নেই এমনটা নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু তারা ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছেন। কারণ এরাজ্যে আগে উপাচার্য হওয়ার জন্য অন্তত ১০ বছরের ‘অধ্যাপক’ (প্রোফেসর) পদের অভিজ্ঞতা আর ৫ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক ছিল। আজ যোগ্য মানুষ চাই না বাধ্য লোক চাই। তাই ‘অধ্যাপক’ হিসেবে থাকার ন্যুনতম যোগ্যতার বালাই নেই। জীবনে কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর অভিজ্ঞতা ছাড়াই কেবলমাত্র ‘ডিসট্যান্স এডুকেশন’–এ ডিগ্রি পাওয়া শিক্ষাবিদও শিক্ষাক্ষেত্রে ওই ধরনের পদ পেয়ে যাচ্ছেন। এনারা রাত্রে কলেজ খুলে রাখা কেন, প্রভুদের আদেশ হলে শিক্ষায়তনে বোমা বানাবার অনুমতিও দিয়ে দেবেন। এনারা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী, যিনি টেবিলের ওপর পা তুলে অভদ্র ইংরেজ ঊর্ধ্বতনকে সহবত শিখিয়েছিলেন। বাস্তবিক অর্থেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাটা বাংলায় এক যুগের সমাপ্তির দ্যোতক।
এরাজ্যে বাবুদের মর্জিমাফিক স্কুল ২ মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষকরা পার্টিকে নজরানা দেয়নি বলে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এসএসসি দিয়ে চাকরি পাওয়া যুবকযুবতীদের রাস্তায় অনশন করতে হয়। মৌলবাদকে তুষ্ট করার জন্য বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়ের কথা আর পড়ানো হয় না। বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগে এরাজ্যে আর ‘ঋ’তে ‘ঋষি’ পড়ানো হয় না। দ্বিতীয় ভাগে ‘রাম বড় সুবোধ’ পড়ালে শিক্ষকের কারাবাসও হতে পারে। গত ২২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ইন্ডিয়া টুডে ভারতবর্ষের ২১টি রাজ্যে শিক্ষার অবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে দেখা গেছে যে পশ্চিমবঙ্গে স্থান ১৭ তম। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ফেলার এটাই তো আদর্শ সময় এই রাজ্যে।
বিদ্যাসাগর মানে শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা অত্যন্ত দরিদ্র ঘরের ছেলে ছিলেন তবে তথাকথিত উচ্চবর্ণের পরিবার থেকে এসেছিলেন। এমনই দরিদ্র সাধারণ জাতিভুক্ত ছেলেমেয়েদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করেছে। এমন কোনও কেন্দ্রীয় আইনের রাজ্যে প্রয়োগের জন্য রাজ্য ‘কর্মীবর্গ দফতর’ একটি ম্যাচিং নোটিফিকেশন জেলা শাসকের অফিসে পাঠায়। উচ্চবর্ণের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সংরক্ষণের বিষয়ে এখনও কোনও নোটিফিকেশন এরাজ্যে আসেনি। তাই জয়েন্ট এন্ট্রাসের মতো পরীক্ষাতেও অন্য রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা ওই সার্টিফিকেট নিয়ে পরীক্ষাতে বসছে কিন্তু এরাজ্যের যোগ্য ছাত্রছাত্রীরা সুযোগ পাবে না। সত্যিই তো শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র শর্মার মূর্তি এরাজ্যে থাকবে কেন? বাঙালি শিক্ষিত প্রতিবাদী, সাহসী মানুষের চেহারা দেখলে তো লজ্জা পাবে।
গত কয়েকদিন যাবৎ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কয়েকটি স্থানে ভয়ানক হিংসার ঘটনা হচ্ছে। ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত কয়েকটি জায়গায় গ্রামকে গ্রাম অত্যাচার করে সেখানকার মানুষদের উৎখাত করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তির এক রাজনৈতিক নেতার দিকে। ঘটনা এত ভীষণ জায়গাতে গেছে যে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি ৩/৪ দিন অপেক্ষা করে মানুষের স্বার্থে তা প্রচার করেছে। কিন্তু কলকাতায় এইসব এগিয়ে থাকা সংবাদমাধ্যমে এত অত্যাচারের একটি কথাও প্রকাশ করেনি। বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও কিছু আসেনি। কেন? সাংবাদিকতার নীতি? সামাজিক দায়িত্ব? নাকি একেবারেই কর্তাভজার দায়বদ্ধতা? এদের পক্ষেই সম্ভব কোনও সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বিদ্যাসাগরের মুণ্ডহীন মর্মর মূর্তিতে তাজা ফুলের মালা দেওয়া ছবি ছাপানো। কারণ তাতে কোনও পক্ষের সুবিধা হবে। আজ বোধহয় এই কর্তাভজা, লোভী মেরুদণ্ডহীন তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালি বীরসিংহের ওই পুরুষসিংহের চাপরাশ বহন করার যোগ্যতাটাও হারিয়ে ফেলেছে।
জিষ্ণু বসু
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত
লেখকসাহা ইনস্টিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এ কর্মরত। বাংলায় প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাস লেখেন।