ঠিক এই ৭ টি কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবি হলো তৃণমূলের।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে চলে এসেছে। দেশে নতুন ইতিহাস তৈরী হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী আরো একবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসতে চলেছেন। নরেন্দ্র মোদী আরো একবার নির্বাচনে জিতে ইতিহাস গড়ে দিয়েছেন। ২০১৪ সালের থেকে বড় জয় পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। অর্থাৎ আগের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় ফিরে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন সিনেমার থেকে কোনো অংশে কম ছিল। আক্রমন, পাল্টা আক্রমণ,অভিযোগ, সাসপেন্স সব মিলিয়ে জমে উঠেছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের উৎসব। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের ছবি একটু আলাদা ছিল। লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে হিংসার ছবি দেখা গেছিল। যার জন্য পুরো দেশের মিডিয়ার ক্যামেরা পশ্চিমবঙ্গের উপর ছিল। পশ্চিমবঙ্গে মোদী বনাম মমতার লড়াই এর উপরেও নজর ছিল সবার। পশ্চিমবঙ্গে TMC ২০১৪ সালে ৩৪ আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে বিজেপি মাত্র ২ টি আসন পেয়েছিল। তবে এবারের পশ্চিমবঙ্গে BJP ১৮ টি, TMC ২২ টি এবং কংগ্রেস ২ টি আসনে জয়লাভ করেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের এমন ভরাডুবির কারণ বেশ লক্ষণীয়-

প্রথমত: মুসলিম তোষণ- ভারতীয় রাজনীতিতে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য কংগ্রেস যে নীতি প্রয়োগ করে সেই একই নীতি পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োগ করেছিল TMC পার্টি। অর্থাৎ হিন্দুদের অবহেলা করে মুসলিম সমাজকে তোষণ। মাদ্রাসা জন্য বেশি অর্থ বরাদ্দ করা, সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের টাকা পাইয়ে দেওয়া, আইন কানুনের ক্ষেত্রে মুসলিমদের ছাড় দেওয়া ইত্যাদি নানা অভিযোগ মমতা ব্যানার্জীর সরকারের বিরুদ্ধে উঠে এসেছ। মুসলিম তোষণের জন্যেই আসানসোল, বসিরহাট, কালিয়াচকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। দুর্গাপূজা বিসর্জনে বাধা, উর্দূ ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগও বার বার সামনে এসেছিল। এছাড়াও জয় শ্রী রাম বলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা মানুষের মনে খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছিল।

দ্বিতীয়: রোহিঙ্গা মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন- একদিকে যখন কেন্দ্র সরকার বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বের করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল। তখণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী খোলাখুলি ভোট ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য এই অনুপ্রবেশকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশী মুসলিমদের ঢুকিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বহুবার উঠে এসেছে।

তৃতীয়: চিটফান্ড কান্ড- তৃনমূলের সময়েই চিটফান্ডের মাধ্যমে বহু মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা রাজ্যের মানুষকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছিল। এমনকি তৃণমূলের কিছু নেতাও এই চিটফান্ড এর সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ এসেছিল। সবথেকে বড় ঘটনা তখন হয় যখন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী CBI এর তদন্তের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাজীব কুমারকে বাঁচানোর জন্য ধর্ণায় বসে গেছিলেন। এটা সাধারণ মানুষজন খুবই খারাপ চোখে দেখেছিল। রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষের মত ছিল, CBI কে তাদের নিজের কাজ করতে দেওয়া উচিত।

চতুর্থ: কর্মসংস্থান না থাকা- রাজ্যে লাগাতর প্রাইমারি টেট ও SSC তে নিযুক্ত করা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছিল। ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া এবং পাশ করা ছেলে মেয়েকে অবহেলা করার অভিযোগ বার বার উঠে এসেছিল। এমনকি বার বার অনশন করেও কোন লাভ পায়নি রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবকরা। WBPSC পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এসেছিল।শুধু এই নয়, রাজ্যের প্রচুর পরিমানে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তৈরি হলেও ইঞ্জিনিয়ার পাশ করা ছাত্রদের জন্য চাকরির কোনো ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। ইঞ্জিনিয়ার পাশ করে রাজ্যের ছেলে মেয়েকে বাইরের রাজ্যে চাকরি করতে যেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।

পঞ্চম: পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের তোষণ নীতিকে কেন্দ্র করে বিরোধ হিসেবে রাজ্যে রাষ্ট্রবাদী জাতীয়তাবাদী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান ঘটে। যার ফলে হিন্দুরা রাজনৈতিকভাবে এক হয়ে উঠে এবং বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে বেছে নেয়। এর ফলে সরাসরি ক্ষতি হয় তৃণমূল কংগ্রেসের।

ষষ্ঠ: গণতন্ত্রের হত্যা: রাজ্যে তৃণমূলের গুন্ডা ব্রিগেড মানুষকে হুমকি দিয়ে ভোট লুটে নেওয়ার যে চেষ্টা করেছিল তা মোটেও মেনে নিতে পারেনি বাঙালিরা। পঞ্চায়েত ও পৌরসভার নির্বাচনে গুন্ডাগিরি চরমে উঠেছিল। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরন করা হয়েছিল। যার জন্য লোকসভাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পাশে পেয়ে মানুষ নিজের অধিকারের ভরপুর প্রয়োগ করেছিল। এতে বহু মানুষ নিজের রোষ EVM এ ভোট দিয়েই ব্যাক্ত করেছিল।

সপ্তম: সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের উপর প্ৰশ্ন- পাকিস্তানের উপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এয়ার স্ট্রাইক হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি বেড়েছিল। অন্যদিকে এই স্ট্রাইক নিয়ে প্রমান চাওয়ায় বিরোধী দলের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছিল দেশের সাধারণ মানুষ। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পার্টির ভিন্ন মত থাকতে পারে কিন্তু দেশের সুরক্ষার ক্ষেতে সব পার্টিকে এক হওয়া উচিত বলে মত ছিল জনগণের। তাই যারাই এয়ার স্ট্রাইকের প্রমান চেয়েছিলেন তাদের লোকপ্রিয়তার মধ্যে ঘাটা দেখা গেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও প্রমান চাইতে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছিলেন।

মূলত এই কারণগুলির জন্যেই রাজ্যে তৃণমূল ৩৪ টি আসন থেকে কমে ২২ টি আসনে দাঁড়িয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.