কৃষকবন্ধু হয়ে কৃষক মহল্লায় দিন কাটালেন জে পি নাড্ডা

দিল্লিতে যখন নতুন কৃষি আইন চালু করা নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে দ্বৈরথে নাজেহাল কেন্দ্রীয় সরকার, তখন শনিবার ঘটা করে কৃষক সুরক্ষা অভিযান শুরু করল বিজেপি। বর্ধমানের কাটোয়া থেকে এই অভিযান শুরু করলেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা।

নামে কৃষক সুরক্ষা অভিযান হলেও আসলে বাংলা দখল অভিযানের প্রচার এবং জনসংযোগ জোরকদমে শুরু করলেন জে পি নাড্ডা। শুরু করলেন বলাটা ঠিক হবে না কারণ শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই। দফায় দফায়। নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে। এদিনের কৃষক সুরক্ষা অভিযান মূলত বিজেপির সর্বভারতীয় কর্মসূচি।

এই কর্মসূচিতে দেশের ৫৮ হাজার গ্রামে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা যাবেন কৃষকদের কাছে। তাঁদের কাছ থেকে প্রতীকী শস্য সংগ্রহ করবেন। বাংলা থেকেই তার সূচনা করলেন জাতীয় সভাপতি। অল্প কয়েকদিন আগেই বিজেপি সভাপতি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এসেছিলেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে।

সেদিন ভয়ঙ্কর ধুন্ধুমারের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাই নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর চলছে এখনও। উপর্যুপরি তিনি আবার এলেন। হেলিকপ্টারে কাটোয়ায় নেমে কর্মসূচির সূচনা করলেন। রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের নিয়ে জনা পাঁচেক কৃষকের বাড়িতে গেলেন শস্য সংগ্রহ করতে। মুঠো ভরে শস্য নিয়ে সঙ্গের গেরুয়া ব্যাগে রাখলেন।

সেইসব বাড়ির মহিলাদের তৃপ্ত করে সপারিষদ নলেন গুড়ের রসগোল্লাও খেলেন নাড্ডা। মধ্যাহ্নভোজ সারলেন আর এক কৃষকের বাড়িতে। বাড়ির মহিলাদের রান্না করা অন্নব্যঞ্জনে তৃপ্ত হয়ে তাঁদের মিষ্টি মিষ্টি অনেক কথা শোনালেন। সেখানকার পর্ব সাঙ্গ করে কপ্টারে চেপে চলে গেলেন বর্ধমান। বিরহাটা থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত রোড শোয়ে অংশ নিলেন।

এখনও পর্যন্ত তো সব ঠিকই ছিল। নির্বিঘ্নে সব নির্দিষ্ট কর্মসূচিতে অংশ নিলেন নাড্ডা। কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। আগের বারের মতো ধুন্ধুমারের মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু আসলে তাঁদের ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপদার্থ প্রমাণিত করা, তাঁকে চোর দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষক প্রমাণ করা এবং তাঁরা সরকারে এলে এই রাজ্যকে রামরাজত্ব তৈরি করার জন্য ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতি বিতরণ করা। তাই করেছেন নাড্ডা। বলেছেন কৃষকদের নিয়েই তাদের সরকার তৈরি হবে।

কৃষকদের সহ রাজ্যের সব মানুষকে দুধে-ভাতে রাখবেন তাঁরা। তাঁরা সরকারে এলেই কৃষক সম্মান নিধির ৬০০০ টাকা করে কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে ঢুকে যাবে। আগের দিন কৈলাস বিজয়বর্গীয় অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা সরকারে এলেই বকেয়া ১৮ হাজার টাকা করে সব কৃষকের একাউন্টে ঢুকে যাবে।

অবশ্য নাড্ডা কৃষকদের জানাননি, কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক সম্মান নিধির টাকা যে সবাই পাবেন তা নয়। কারা কারা পাবেন আর কারা কারা পাবেন না তার একটা বিরাট ফিরিস্তি দেওয়া আছে। সেইসঙ্গে নাড্ডা এটাও বলেন নি যে এতদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কৃষকদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে সেগুলো চালু রাখা হবে কিনা।

এরাজ্যে কৃষকদের এক একর জমি থাকলেই চাষের খরচ বাবদ বছরে পাঁচহাজার টাকা পেয়ে থাকেন সব কৃষক। তবে কম জমি থাকলে চাষের খরচ বাবদ টাকা কম পাবেন কৃষকরা। তবে কোনও ক্ষেত্রে ১০০০ টাকার কম নয়। এছাড়া কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী ইত্যাদি সুবিধে পাওয়ার যে সমস্ত কর্মসূচি চালু আছে সেগুলো চালু থাকবে কিনা।

এদিন নাড্ডা সাহেব যাঁদের বাড়িতে গেলেন, যাঁদের কাছ থেকে হাত পেতে শস্য সংগ্রহ করলেন, যাঁদের হাত থেকে সপারিষদ নলেন গুড়ের রসগোল্লা খেলেন এবং যাঁদের বাড়িতে বসে মধ্যাহ্নভোজন সারলেন তাঁরা সবাই ওদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বললেন, গদগদ হয়ে আদর আপ্যায়ন করলেন।

নাড্ডারা বেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা সবাই হিসেব করবেন এঁদের প্রতিশ্রুতির ওপর কতটা ভরসা রাখা যায়। তারপর ভাববেন ভোট দিয়ে এঁদের সরকারে আনবেন কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.