শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। প্রার্থী ঘোষণার দিন বিকেলেও মমতায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভাটপাড়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং। কিন্তু দিদি টিকিট দেননি। তাই আর পিছনে ফিরে তাকাননি। বুধবার রাতে দলবল নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দিল্লি। বৃহস্পতিবার দুপুরে যোগ দিলেন বিজেপি-তে। গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েই পুরনো দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে অর্জুন বললেন, “আগে ছিল থ্রি এম। মা-মাটি-মানুষ। সেই পার্টিতে এখন স্রেফ মানি-মানি-মানি।”
দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের পাশে বসে অর্জুন বলেন, “আমি মমতাদির সঙ্গে তিরিশ বছর ছিলাম। এক সঙ্গে লড়াই করে বামপন্থীদের খতম করেছি। কিন্তু এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি।” অর্জুন যে বিজেপি-তে যাচ্ছেন তা আগেই লেখা হয়েছিল দ্য ওয়াল-এ। মঙ্গলবারই তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এ দিন গেরুয়াশিবিরে যোগ দেন চার বারের বিধায়ক তথা ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দাপুটে নেতা অর্জুন। অনেকে বলেন, এ দিকে খড়দহ থেকে ও দিকে শ্যামনগর, জগদ্দল, নৈহাটি— অর্জুনের নামে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। এ বার যে বিজেপি অর্জুনকে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করবে এ তা এক রকম পরিষ্কার। ফলে গত দু’বারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর লড়াইটা যে কঠিন হয়ে গেল এ ব্যাপারেও সন্দেহের অবকাশ নেই।
এ দিন বিজেপি পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল ছাড়ার পিছনে অন্য একটি কারণের কথাও উল্লেখ করেন অর্জুন। তিনি পুলওয়ামার জঙ্গি হামলা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের সমালোচনা করেন। উত্তর চব্বিশ পরগনার দাবাং নেতা বলেন, “যখন জওয়ানদের দেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, গোটা দেশ কাঁদছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী নানান প্রশ্ন তুলেছেন।” তবে ১৪ মার্চ অর্জুনের মুখে এ কথা শুনে অনেকেই মুচকি হেসেছেন। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার দু’দিন পর মমতা বলেছিলেন, “তদন্ত না করে কোনও দেশের উপর দোষ চাপানো ঠিক হবে না।” তার পরেও একাধিকবার জওয়ানদের নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “অর্জুনের এত দিন পর সে সব মনে পড়ল? পরশুদিনও তো দিদির বাড়ির দোরগোড়ায় ঘুরঘুর করছিল।”
বুধবার বিকেলে ৪২ জন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সাংবাদিক সম্মেলনেও মমতা বলেছিলেন, “দু’এক জন আছেন, যাঁদের প্রার্থী হওয়ার লোভ ছিল। তাঁরা যদি অন্য দলে যায় আমার তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ তৃণমূল মাটির পার্টি।” সোমবার দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গেই অর্জুনকে নবান্নে ডেকেছিলেন মমতা। বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন। তৃণমূলের অনেকের দাবি, অর্জুনকে বলা হয় মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজল না।
মুকুল রায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর প্রথম জনসভা করেছিলেন ২০১৭-র ১০ ডিসেম্বর। রানি রাসমণি রোডের সেই সভা থেকে ফাইল দেখিয়ে, বিশ্ববাংলার লোগোর মালিকানা নিয়ে একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড তির ছুড়েছিলেন কালীঘাটের দিকেই। তার বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূলের পাল্টা সভায় মুকুলের বিরুদ্ধেই ‘গদ্দার’ বলে তোপ দেগেছিলেন অর্জুন। বলেছিলেন, “আপনি যা করেছেন তাতে ছাড় পাবেন না। ভারতবর্ষের আইন কাউকে ছাড়ে না। আপনি একজন গদ্দার গদ্দার গদ্দার।” কিন্তু রাজনীতি তো সম্ভাবনার খেলা। সেই মুকুল রায়ের পাশে বসেই এ দিন অর্জুন জানিয়ে দিলেন, দিদি নয়, মোদীর পথেই এ বার থেকে চলবেন তিনি। অর্জুনের সেদিনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পর মুকুলবাবু বলেন, “ওসব তো অর্জুনকে দিয়ে মমতা বলিয়েছিলেন। অর্জুন আমার ভাইয়ের মতো। মমতাও বুঝে গেছেন, তৃণমূলের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে।”