বর্ণময় জীবনের বর্নের পরিচিতি যাঁর হাত ধরে,যাঁর ছোঁয়ার বাংলা গদ্যের প্রানসঞ্চার সেই নারী জীবনের দুর্গতি মোচনের নায়ক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।অগাধ পান্ডিত্যের ভান্ডার যিনি নিত্যদিনের অভাব হার মেনেছে তাঁর কাছে।বাংলা-সংস্কৃত-ইংরেজি তিন সাহিত্যেই ছিল অগাধ বিচরন,সঙ্গে আয়ত্ব করেছিলেন ব্যকরন,বেদান্ত,স্মৃতি,ন্যায় ও জ্যোতিষচর্চা।তাই তো পরীক্ষান্তে প্রাপ্তি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি।সারাজীবন ব্যাপী নানান কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সংস্কৃত কলেজের সম্পাদক পরে অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত হন।ঠিক তারপরই অনুসন্ধান করতে থাকেন শিক্ষা বিস্তারের নানাবিধ উপায়।শুরু করেন গ্রন্থ রচনা ও স্থাপন করেন নানা স্কুল কলেজ।স্ত্রী শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।শুধু মাত্র বালিকাদের জন্য ৩৫টি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।বাল্যবিবাহ রধ,বিধবা বিবাহ তথা পুনবিবাহ স্থাপনে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর।এই বিষয়ে তিনি ‘তত্ত্ববোধনী’ সহ আরও অনেক পত্রিকায় প্রবন্ধ রচনা করেন।বহুবিবাহ রধেও তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন।
জনদরদী ছিলেন বলেই তাঁর অপর নাম ‘দয়ার সাগর’।সমাজ সংস্করণমূলক কাজের জন্য আত্মীয় বন্ধুমহল তাঁকে পরিত্যাগ করলেও নিজের কর্মের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা তাঁকে চির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে রখেছে।অনুবাদ মূলক সাহিত্যের পাশাপাশি শিশুপাঠযোগ্য নানান মৌলিক রচনা করেছেন।সাহিত্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল-‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’,’সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’,’ব্যাকরণ কৌমুদি’,’শকুন্তলা’,’সীতার বনবাস’,’ভ্রান্তিবিলাস’ইত্যাদি।তিনি ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য’ ছদ্মনামে অতি অল্প হইল,আবার অতি অল্প হইল ও ব্রজবিলাস এই তিনটি গ্রন্থ রচনা করেন।এছাড়াও ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোসহচরস্য’ ছদ্মনামে রত্নপরীক্ষা গ্রন্থ রচনা করেন।
বাংলা ভাষা গঠন তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি।বাংলা ভাষার রূপতাত্ত্বিক পরিবর্তনটিও তিনি আবিষ্কার করেন।ছেদ যতি ইত্যাদি আরও নানান ছোট খাটো বিষয়ে তিনি পরীক্ষা করেছেন ও যথাযথ অভিমতও প্রদান করেছেন তাই তো ‘বাংলা গদ্যের জনক’ তিনি।
তবুও অবাক হতে হয় আজ ২০০ বছর পরও যখন বাংলা ভাষার শ্রেষ্টত্ব নিয়ে সংশয় দেখা যায়। আজও বিধবাবিবাহ যখন সমাজে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়,বাল্যবিবাহের স্বীকার হতে হয় বহু বালিকাকে এমনকি স্ত্রী শিক্ষার ক্ষেত্রেও যখন এত বাধা তখন লজ্জা আর নিজেদের ধিক্কার দেওয়া ছাড়া কিছু বাকি থাকে না।ঘটা করে ফুল আর ধূপ দিয়ে দ্বিশতবর্ষ জন্মদিবস পালন নয় তাঁর কর্ম ও প্রচেষ্টা কে যদি পাথেয় করে তুলতে পারি সেখানেই লুকিয়ে থাকবে জন্মদিনের সার্থকতা।।
কলমে-শুভেচ্ছা চ্যাটার্জী