মমতা ব্যানার্জীর প্রথম মহামিছিল ২৫ সে নভেম্বর ১৯৯২ l সোমেন মিত্রর কাছে তার কয়েকমাস আগেই হেরে যান সভাপতি নির্বাচনে l ১৯৭৮ এ গঠিত ইন্দিরা কংগ্রেসের রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রথম অগান্ধী সভাপতি রাওজি প্রথমবার সংগঠনিক নির্বাচন করেন l কিন্তু মমতা ব্যানার্জী তো গান্ধী পরিবারেরই নীতি মানেন? তাই হার মানতে পারেন নি l ২০ লক্ষ লোক আনলেন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে l অনেকেই বলেছিলেন, ১৯৫৫ তে ক্রুশচেব বুলগানিনের সভাকে ছাড়িয়ে গেছে এই সভা l মঞ্চে প্রিয় দাশমুন্সী বার খাইয়ে বলেন, সংগঠনিক নির্বাচন নয়, ব্রিগেডের ভীড় প্রমান করে কে আসল সেনাপতি l ব্যাস l ম্যাডাম কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করলেন l (যারা বাগচীবাবুকে দেখে হাসেন, তারা পরের ১৯ বছরের কথা শুনুন l)
এর আট মাস পর এই ২১ শে জুলাই l আবার যুব কংগ্রেসের ডাকে l ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২, চীন বাদে পৃথিবীর সব দেশে সিনিয়র জর্জ বুশ কমিউনিস্ট সরকার ফেলে দিয়েছে l জ্যোতিবাবুকে ট্রেনে বাসে লোকজন দুই অক্ষর চার অক্ষর ছাড়া ডাকে না l অনেকেই বলছেন, চাওসেস্কুর মত মারা হবে জ্যোতিবাবুকে l সেই ভয় থেকেই মহাকরণ অবরোধের দিন মনীষ গুপ্ত, তুষার তালুকদারদের নির্দেশে গুলি l তারপর প্রতি বছর তৃণমূল এই দিন লক্ষ লক্ষ লোক এখানে আসেন মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে l
আর সোমেন মিত্র?
সোমেন মিত্রর ডাকে মেরে কেটে ৫০০ ও লোক হত না l কিন্তু ব্যালট বাক্সে সাফল্য কার?
১৯৯৬ ভোটের আগে মমতা ব্যানার্জী এবং সোমেন মিত্রর কথা বন্ধ l রাওজি দুজনকে দিল্লী ডাকলেন l বললেন ২৯৪ টা আসন ১৪৭ করে ভাগ করে নিতে l দিল্লীতে চলল মিটিং l একদিকে সোমেন মিত্র জয়নাল আবেদিন এবং সম্ভবত: সুব্রত মুখার্জী l অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জী, প্রিয়বাবু এবং তৃতীয় ঠিক মনে পড়ছে না l ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের দল বদলের মত রোজ কাগজে খবর l একটা উদাহরণ দি l জয়নাল সাহেব মমতা ব্যানার্জীকে বলেন তুমি কাল নাগিনী l উত্তরে মমতা বলেন, আপনি কেউটে l আপনাকে শেষ করার জন্য কালনাগিনী প্রয়োজন l এটা আনন্দবাজারের খবর l মার্চ ১৯৯৬ এর কোন এক দিন l আরকাইভ এ পাওয়া যাবে l শেষে ১৪৭ টা আসন ভাগ হল l
৫০০ র সোমেন বাবুর ৫৬ জন জিতলো এবং ২০০০০০০ এর মমতা ব্যানার্জীর ২৮ জন l কিভাবে বলছি?রেকর্ড আছে l ভোটের পর রাওজি তখনো সীতারাম কেশরীকে দলের রাশ ছাড়েন নি l কে বিরোধী নেতা হবে সেই নিয়ে গন্ডগোল l আবার পরিষদীয় দলের ভোট নিতে বলেন রাওজি l সোমেনবাবুর প্রতিনিধি অতীশ সিনহা পান ৫৬, মমতা ব্যানার্জীর প্রতিনিধি সৌগত রায় ২৮ l
তারপর?
মমতা ব্যানার্জী নিজের দল শুরু করেন ১৯৯৮ এ l ১৯৯৮, ১৯৯৯ বিজেপির সঙ্গে নির্বাচনে লড়েন l সোমেনবাবুর পদ ছেড়ে দেন l সেই পদে প্রথমে আসেন গণিখান সাহেন এবং প্রিয়বাবু l ২০০১ ভোটের ঠিক আগে তাঁদের সরিয়ে প্রণব বাবু l মমতা বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসকে ধরলেন l আবার শুরু হল দর হাঁকানো l ক্ষমতাহীন সোমেন মিত্রর অনুগামী সেই ৫৬ জনের ১৫ জনকে টিকিট দিলেন না প্রণব-প্ৰিয় লবি l তারা কেউ NCP কেউ বিজেপিতে যোগ দিলেন l দরাদরি কংগ্রেসকে দেয়া হল ৫৬ টা আসন এবং তৃণমূল ২৩৮ l জিতলো কংগ্রেসের ২৮, তৃণমূলের ৫৬ l অর্থাৎ কংগ্রেসের সাফল্য ৫০% এবং তৃণমূলের ২৩.৫% l সোমেন বাবু আবার প্রমান করলেন, ২০ লক্ষ লোক জমা করা আর ভোটে জেতা এক জিনিস নয় l
এই লেখার উদ্দেশ্য একটাই l মাঠের লড়াই দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না l ১৯৯৩ থেকে আজ প্রতিবার এই দিনে ২০ লক্ষ লোক হয়েছে l কিন্তু ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিবার তৃণমূল হেরেছে l পদাতিক সৈন্য সবাইকেই রাখতে হয়, কিন্তু যুদ্ধ জেতাতে হয় সেনাপতিকে l আজ পর্যন্ত কোন যুদ্ধ পদাতিক সেনারা জেতায় নি l না কুরুক্ষেত্র না ২০১১ র বিধানসভা l ২০১১ র যুদ্ধ জয়ের কারিগর সোনিয়া গান্ধী এবং এম.কে নারায়ণন l তৃণমূলের ২০ লক্ষ সৈনিক নয় l
আরও প্রমান চাই?
কটা মাস অপেক্ষা করুন l তৃণমূল এবং বামেদের থেকে ব্রিগেড ডাকলে আমাদের লোক কম আসবে l কিন্তু আমরা খুব খারাপ ফল করলে ২৫ টা আসন পাবো ৪২ এ l বামেরা যাদবপুর বাদে একটা কেন্দ্রে জেতা তো দূর জামানাত রাখতে পারবে না l বাকি কংগ্রেস তৃণমূল জোট খুব বেশী হলে ১৭ l মিলিয়ে নেবেন l
পদাতিক দিয়ে যুদ্ধ হয় না, যুদ্ধ করে সেনাপতি l সেই কুরুক্ষেত্র থেকে ২০১১, একই সূত্র l আজ ২০ লক্ষ মানুষ আসবে বটে, কিনা ২০২৪ এ কাজে আসবে কি?
✒️সুদীপ্ত গুহ।